হাদিস ও হাদিসের জ্ঞানসমূহ

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি্ ওয়া সাল্লামের চিহ্ণাবশেষ দিয়ে বরকত লাভ করা জায়েয; তিনি ছাড়া অন্য কারোটা দিয়ে জায়েয নয়

প্রশ্ন

প্রশ্ন: প্রিয় মুসলিম ভাইয়েরা, আমি ইন্টারনেটে একটি ওয়েব সাইট ভিজিট করেছি। সেখানে আমি এমন একটি তথ্য পেয়েছি যেটাকে আমার কাছে বিদআত মনে হয়; আল্লাহ্‌ই ভাল জানেন। আমি আশা করব, আপনারা আমাকে এ হাদিসের বিশুদ্ধতার ব্যাপারে অবহিত করবেন। কেননা হাদিসটির ব্যাপারে আমার সন্দেহ হচ্ছে। সহিহ মুসলিমের অধ্যায় ২৪ হাদিস নং ৫১৪৯ এ আসমা বিনতে আবু বকর (রাঃ) এর ক্রীতদাস আব্দুল্লাহ্‌ (সে ছিল আতা এর ছেলের মামা) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন: “আসমা আমাকে আব্দুল্লাহ্‌ বিন উমরের কাছে এই কথা বলতে পাঠালেন যে, আমার কাছে সংবাদ এসেছে যে, তুমি নাকি তিনটি জিনিসকে হারাম মনে কর। কাপড়ে (রেশমের) নকশা বা নকশী পাড়, গাঢ় লাল রং এর মীছারা (রেশমের তৈরী লাল বর্ণের হাওদার আচ্ছাদন) ও রজবের পুরো মাস রোযা পালন করা।
তখন আবদুল্লাহ (রাঃ) আমাকে বললেন, আপনি যে রজব মাসের রোযা হারামের কথা বললেন এটা এমন ব্যক্তির পক্ষে কিভাবে বলা সম্ভব যিনি সারা বছর রোযা পালন করেন? আর আপনি যে কাপড়ে (রেশমের) পাড় বা নকশার কথা বললেন, এ সমন্ধে আমি উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেন: আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, রেশমী কাপড় কেবল সে লোকই পরবে (পরকালে) যার কোন হিসসা নেই। তাই আমার আশংকা হল নকশাও এর অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। আর গাঢ় লাল রঙ-এর মীছারা (পর্দার আচ্ছাদন): এই তো আব্দুল্লাহর মীছারা। দেখলাম, আসলেই সেটি গাঢ় লাল রং-এর (সুতি বা পশমী কাপড়)। এরপর আমি আসমা (রাঃ) এর কাছে ফিরে গেলাম এবং তাঁকে এ বিষয়ে খবর দিলাম। তখন তিনি বললেন: এটি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জুব্বা। এই বলে তিনি একটি তায়লামান কিসরাওয়ানী (পারস্য সম্রাট কিসরার দিকে সন্বন্ধযুক্ত) সবুজ রং এর একটি জুব্বা বের করলেন যার পকেটটি ছিল রেশমের তৈরি এবং এর দুই পাশের ফাঁড়া ছিল খাঁটি রেশমের টুকরা দ্বারা আবৃত। তিনি বললেন, এটি আয়িশার মৃত্যু পর্যন্ত তাঁর কাছেই ছিল। তাঁর মৃত্যুর পর আমি এটি নিয়েছি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটি পরিধান করতেন। তাই আমরা রোগীদের আরোগ্য হাসিলের জন্য এটি ধৌত করি এবং সে পানি তাদের কে পান করিয়ে থাকি।” এ হাদিস সহিহ কিনা?

উত্তরঃ আলহামদুলিল্লাহ। এ হাদিসটি ইমাম মুসলিম তাঁর সহিহ গ্রন্থে (২০৬৯) বর্ণনা করেছেন; যেমনটি প্রশ্নকারী ভাই উল্লেখ করেছেন ঠিক সে ভাষায়।

ইমাম আহমাদ তাঁর ‘মুসনাদ’ গ্রন্থেও (১৮২) সংক্ষেপে হাদিসটি সংকলন করেছেন। বাইহাকী তাঁর ‘সুনান’ গ্রন্থে (৪৩৮১) আব্দুল মালিক (তিনি হচ্ছেন আবু সুলাইমান এর ছেলে) এর সূত্রে একই সনদে হাদিসটি উল্লেখ করেছেন। এই সনদটি মুত্তাসিল ও সহিহ; এর বর্ণনাকারীগণ সকলে নির্ভরযোগ্য। এ হাদিসটির শুদ্ধতা সাব্যস্তের জন্য হাদিসটি সহিহ মুসলিমে থাকাই যথেষ্ট। এ হাদিসকে কেউ প্রশ্নবিদ্ধ করে কথা বলেছেন মর্মে আমাদের জানা নেই। সুতরাং এমন একটি হাদিসকে কটাক্ষ করা কিংবা এটাকে সহিহ বলা থেকে বিরত থাকা নাজায়েয।

এ হাদিসটির ব্যাখ্যায় ইমাম নববী (রহঃ) বলেন:

রজব মাসে রোযা রাখা হারাম মর্মে যে সংবাদ ইবনে উমর থেকে বর্ণনা করা হয়েছে তিনি সে সংবাদকে অস্বীকার করেছেন। বরং তিনি জানাচ্ছেন যে, তিনি গোটা রজব মাস রোযা রাখেন; যেহেতু তিনি সারা বছর রোযা পালন করেন। সারা বছর রোযা পালন করেন মানে দুই ঈদের দিনগুলো ও তাশরিকের দিনগুলো ব্যতীত। এটি ইবনে উমর (রাঃ), তাঁর পিতা উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ), আয়িশা (রাঃ), আবু তালহা (রাঃ) প্রমুখ সাহাবীদের অভিমত। ইমাম শাফেয়ি ও অপরাপর কিছু আলেমের অভিমতও হচ্ছে, সারা বছর রোযা রাখা মাকরূহ নয়।

আর আসমা (রাঃ) কাপড়ে (রেশমের) নকশা করা হারাম মর্মে ইবনে উমর (রাঃ) এর যে অভিমত উল্লেখ করেছেন ইবনে উমর (রাঃ) সেটা স্বীকার করেননি। বরং তিনি জানিয়ে দেন যে, তিনি এ ব্যাপারে অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করেন এ আশংকা থেকে যেন রেশম সম্পর্কে সাধারণ যে নিষেধাজ্ঞা এসেছে তার অধীনে নকশা যেন পড়ে না যায়। আর মীছারা সম্পর্কে তার থেকে আসমার কাছে যা পৌঁছেছে সেটাও তিনি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন: এটাই তো আমার মীছারা। সে মীছারাটি ছিল আরজুওয়ানের তৈরী। আরজুওয়ান দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে- লাল রঙের; রেশমের তৈরী নয়। বরং সেটি ছিল পশম কিংবা অন্য কিছু দিয়ে তৈরী। যেসব হাদিসে আরজুওয়ানের মীছারা থেকে নিষেধ করা হয়েছে সেসব হাদিসের বিধান রেশম ব্যবহার করা নিষেধকারী হাদিসসমূহ দ্বারা সীমাবদ্ধ হবে।

আর আসমা (রাঃ) যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রেশমের হাতাযুক্ত জুব্বা বের করে দেখিয়েছেন সেটা এ কথা বুঝানোর জন্য করেছেন যে, এ ধরণের জামা ব্যবহার হারাম নয়। শাফেয়ি মাযহাব ও অন্যান্য মাযহাবের এটাই অভিমত যে, যদি কোন জুব্বা, কিংবা পাগড়ির পার্শ্ব বিশেষ রেশমের তৈরী হয় যদি সে রেশমের পরিমাণ চার আঙ্গুলের চেয়ে বেশি না হয় তাহলে সেটা ব্যবহার করা জায়েয। চার আঙ্গুলের বেশি হলে হারাম।

হাদিস থেকে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, রেশম সম্পর্কে যে নিষেধাজ্ঞা এসেছে সেটা সম্পূর্ণ পোশাক রেশম দিয়ে তৈরী হলে কিংবা বেশির ভাগ অংশ রেশম দিয়ে তৈরী হলে সে পোশাকের ক্ষেত্রে। এ নিষেধাজ্ঞার দ্বারা আংশিক রেশমের ব্যবহার হারাম হওয়া উদ্দেশ্য নয়; যেমনটি মদ ও স্বর্ণের ক্ষেত্রে উদ্দেশ্য। কারণ মদ ও স্বর্ণের ক্ষুদ্র অংশও হারাম।[সংক্ষেপিত ও সমাপ্ত]

আর আসমা (রাঃ) হাদিসের শেষাংশে যে কথা বলেছেন যে, “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটি পরিধান করতেন। তাই আমরা রোগীদের আরোগ্য হাসিলের জন্য এটি ধৌত করি এবং সে পানি তাদেরকে পান করিয়ে থাকি।” এ ধরণের বরকত গ্রহণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে খাস। সলফে সালেহীনগণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চিহ্ণাবশেষ ছাড়া অন্য কারো চিহ্ণাবশেষ এর ক্ষেত্রে এ ধরণের কাজ করতেন না।

সূত্রঃ islamqa.info

➥ লিংকটি কপি অথবা প্রিন্ট করে শেয়ার করুন:
পুরোটা দেখুন

Mahmud Ibn Shahid Ullah

"যে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়, সৎকর্ম করে এবং বলে, আমি একজন মুসলিম, তার কথা অপেক্ষা উত্তম কথা আর কার?" আমি একজন তালিবুল ইলম। আমি নিজেকে ভুলের উর্ধ্বে মনে করি না এবং আমিই হক্ব বাকি সবাই বাতিল এমনও ভাবিনা। অতএব, আমার দ্বারা ভুলত্রুটি হলে নাসীহা প্রদানের জন্যে অনুরোধ রইল। ❛❛যখন দেখবেন বাত্বিল আপনার উপর সন্তুষ্ট, তখন বুঝে নিবেন আপনি ক্রমের হক্ব থেকে বক্রপথে ধবিত হচ্ছেন।❞
এছাড়াও পড়ে দেখুন
Close
Back to top button