সালাতে কী কী সুন্নাত রয়েছে?
ফরয ও ওয়াজিব ব্যতিরেকে এমন কিছু কথা ও কাজ আছে, যা সুন্নাত এর মধ্য থেকে। কোন কিছু জেনে, না জেনে বা ভুলে ছুটে গেলে সালাত বাতিল হয়ে যাবে না, তবে সাওয়াব কমে যাবে। উল্লেখ্য, রাসূলুল্লাহ (স.) ফরয, ওয়াজিব ও সুন্নাত- এসব সহ সালাত আদায় করতেন। নিম্নে সালাতের সুন্নাত সমূহের একটি বিবরণ দেওয়া হলো:
১. দুই হাত কাঁধ বা কান বরাবর উঠানো: (তাকবীরে তাহরীমা, রুকুতে যাওয়া, রুকু থেকে উঠার সময় এবং আত্তাহিয়্যাতুর প্রথম বৈঠক থেকে উঠার সময়।) (বুখারী: ৬৯৯ ইফা.)।
২. বাম হাতের উপর ডান হাত বুকের উপর রাখা। (ইবনে খুযাইমা: ৪৭৯)
৩. দাঁড়ানো ও রুকু অবস্থায় সিজদার জায়গায় দৃষ্টি রাখা। (বায়হাকী ২/২৮৩)
৪. ছানা পড়া। (বুখারী: ৭০৮ ইফা; ৭০০ আধু.)
৫. ‘আউযু বিল্লাহি মিনাশ শায়তানির রাজীম’ পড়া।(আবু দাউদ: ৭৭৫)
৬. “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম ‘ পড়া। (আহমদ: ৩/২৬৪)
৭. সূরা ফাতিহা পড়ার পর ‘আমীন’ বলা। (বুখারী: ৭৪৪ ইফা.; ৭৩৬ আধু.)
৮. যাহেরী সালাতে সূরা আওয়াজ করে পড়া। (বুখারী: ৭২৯ ইফা; ৭২১ আধু.)
৯. চুপি চুপি সালাতে (অর্থাৎ যোহর ও আসর এবং তৃতীয় ও চতুর্থ রাকআতে) চুপে চুপে কিরাআত পড়া। (বুখারী: ৭২৫ ইফা; ৭১৭ আধু.)।
১০. কিরাআত পাঠ শেষে রুকুতে যাওয়ার পূর্বক্ষণে ক্ষণিকের জন্য একটু চুপ থাকা। (আবু দাউদ: ৭৭৮)।
১১. রুকুর সময় হাঁটুতে দু’ হাতের আঙুলগুলো ফাঁকা ফাঁকা করে হাঁটুকে শক্ত করে ধরে রাখা। (আবু দাউদঃ ৭৩১; বুখারী: ৭৯০ ইফা.)।
১২. রুকুতে পিঠ মাটির সমান্তরালে এমনভাবে সোজা রাখা, যাতে সেখানে পানি রাখলে তা সমান উচ্চতায় স্থির থাকে। (আবু দাউদ: ৮৫৯, ইবনে মাজাহ: ৮৭২)
১৩. রুকুতে উভয় হাত দুই পাজর থেকে ফাকা করে দূরে রাখা। (আবু দাউদঃ ৭৩৪)
১৪. রুকু ও সিজদায় তিনবার তাসবীহ পড়া (বেজোড় সংখ্যা উত্তম, জোড় হলেও সমস্যা নেই)। (মুসলিম: ৭৭২)।
১৫. দুই সিজদার মধ্যবর্তী বৈঠকে একাধিকবার মাগফিরাত চাওয়া । রাসূলুল্লাহ (স.) দুই সিজদার মাঝের বৈঠকে পড়তেন ‘রাব্বিগ ফিরুলী’, ‘রাব্বি ফিলী’…. (আবু দাউদ: ৮৭৪)
১৬. রাব্বানা লাকাল হাম্দ ‘ বলার পর এ দু’আটি পড়া: মিল’আস সামা-ওয়া-তি ওয়া মিল’আল আরদি ওয়ামা বাইনাহুমা, ও মিল’আ মা শি’তা মিন শাইয়িন বা‘দু
১৭. সিজদায় যাওয়ার সময় আগে হাত ও পরে হাঁটু রাখা এবং উঠার সময় বিপরীতে আগে হাঁটু ও পরে হাত উঠানো। (আবু দাউদ: ৮৪০)।
১৮. সিজদার সময় দুই হাতের আঙুলগুলো জমিয়ে (মিশিয়ে) রাখা। (হাকেম: ১/২২৪)
১৯. সিজদায় পায়ের আঙুলগুলো পরস্পর ফাঁকা করে রাখা। (আবু দাউদ: ৭৩০)
২০. সিজদারত অবস্থায় পায়ের আঙুলসমূহ কিবলামুখী করে রাখা। (বুখারী: ৭৯০ ইফা.; ৭৮২ আধুনিক)।
২১. দুই বাহু বক্ষদেশ থেকে ফাঁকা করে রাখা, অর্থাৎ বুকের সাথে বাহু মিশিয়ে না রাখা । (বুখারী: ৭৭০ ইফা.; ৭৬২)
২২. পেট থেকে দুই উরুকে ফাঁকা করে রাখা এবং উরুদ্বয় দুই রান থেকে ফাঁকা করে রাখা। (আবু দাউদঃ ৭৩৫)।
২৩. সিজদায় দুই হাত কাঁধ বা কান বরাবর রাখা এবং এ দু হাতের মধ্যবর্তী স্থানে সিজদা করা। (আবু দাউদঃ ৭৩৪; তিরমিযী ২৭০, নাসাঈ ৮৮৯)
২৪. সিজদার সময় দুই পায়ের মধ্যখানে ফাক না রেখে একত্রে মিশিয়ে পা দুটি খাড়া করে রাখা। (মুসলিম: ৪৮৬)।
২৫. সিজদায় বেশি বেশি দু’আ করা। (মুসলিম: ৪৮২)
২৬. আত্তাহিয়্যাতু-এর প্রথম বৈঠকে বাম পা বিছিয়ে এর উপর বসে ডান পা খাড়া করে রাখা। (মুসলিম: ৪৯৮)।
২৭. তাশাহহুদের বৈঠকে দুই হাত দুই উরুর উপর অথবা দুই হাঁটুর উপর রাখা। (মুসলিম: ৫৭৯)
২৮. তাশাহহুদের বৈঠকে এবং দুই সিজদার মধ্যবর্তী বৈঠকে বাহু দু’টি উরুর সাথে মিশিয়ে রাখা অর্থাৎ বাহু ও উরুর মাঝে কোন ফাঁকা না রাখা। (নাসাঈ: ১২৬৪)।
২৯. বৈঠকে ডান হাতের কনিষ্ঠা ও অনামিকা আঙুল দুটি গুটিয়ে রেখে বৃদ্ধা ও মধ্যমা অঙ্গুলিকে গোলাকার করে ধরে শাহাদাত অঙ্গুলি কাবামুখী করে ইশারা করা। (ইবনে মাজাহ: ৯১২)
৩০. দ্বিতীয় ও চতুর্থ রাকআত এর জন্য সিজদা থেকে দাঁড়ানোর পূর্বক্ষণে ‘ইস্তিরাহার বৈঠক করা। (বুখারী: ৭৮৫ ইফা; ৭৭৭ আধু.)।
৩১. সালাতের প্রথম বৈঠকে ‘ইফতিরাশ করা এবং শেষ বৈঠকে ‘তাওয়াররূক’ করা। অর্থাৎ, যে সালাতে মাত্র একবার তাশাহহুদ পড়া হয় সে বৈঠকে ‘ইফতিরাশ করা, আর যে সালাতে দুই বার তাশাহহুদ পড়া হয় এমন সালাতের শেষ বৈঠকে তাওয়াররূক’ করা।
৩২. বসা অবস্থায় দৃষ্টি ডান হাতের শাহাদাত অঙ্গুলি অতিক্রম না করা। (নাসাঈ: ১২৭৫, ১৬৬০)
৩৩. আত্তাহিয়্যাতু পড়া শেষে দু’আ করা এবং চারটি জিনিস থেকে আশ্রয় চাওয়া: (ক. কবরের আযাব, খ. আগুনের আযাব, গ. জীবনমৃত্যুর ফেতনা, ঘ. দাজ্জালের ফেতনা) (বুখারী: ১৩৭৭]। ৩৪. সালাম দেয়ার সময় ডানে ও বামে মুখ ফেরানো। (মুসলিম: ৫৮২, ৪৩১)
সূত্র: প্রশ্নোত্তরে ফিকহুল ইবাদাত
লেখক: অধ্যাপক মোঃ নূরুল ইসলাম