আযান কিভাবে দিবে?
আযান যেভাবে দেবে:
(১) মসজিদের বাইরে দাঁড়িয়ে আযান দেবে। আর ইকামত দেবে মসজিদের ভেতরে দাঁড়িয়ে।
(২) যার গলার আওয়াজ ভালো এবং আযানের জন্য কোন বিনিময় চান না, মুয়াযযিন হওয়ার জন্য তারই অগ্রাধিকার।
(৩) আযানের পূর্বে ওযু করে নেওয়া সুন্নাত (তিরমিযী)। তবে ওযু ছাড়াও আযান দেওয়া জায়েয।
(৪) অতঃপর কাবা শরীফের দিকে মুখ করে দাঁড়াবে।(তিরমিযী)
(৫) দুই আঙুল দুই কানের ছিদ্রের মধ্যে ঢুকিয়ে নেবে। তবে কোন আঙুল ঢুকাবে তা হাদীসে উল্লেখ নেই। অতএব যেকোন আঙুল ঢুকানো যায়।
(৬) প্রতিবারই ‘হাইয়্যা আলাস-সালাহ’ বলার সময় মুখমণ্ডল ডান দিকে এবং ‘হাইয়্যা আলফালাহ’ বলার সময় মুখমণ্ডল বামদিকে ঘুরাবে, তবে দেহ ঘুরাবে না।(আবু দাউদ: ৫২০)।
(৭) উঁচু স্থানে (বা মিনারায়) দাঁড়িয়ে আযান দেওয়া উত্তম। (আবু দাউদ)
(৮) আউয়াল ওয়াক্তে আযান দেবে, দেরি করবে না।
(৯) অতঃপর সাধ্যমতো উচ্চৈঃস্বরে জোরালো কণ্ঠে ধীর ও শান্তভাবে নিম্নবর্ণিত শব্দে আযান দেবে:
আযানের আরবী শব্দ | সংখ্যা | |
الله اكبر – الله اكبر | الله اكبر – الله اكبر | ৪ বার |
اشهد ان لا اله الا الله | اشهد ان لا اله الا الله | ২ বার |
اشهد ان محمد الرسول الله | اشهد ان محمد الرسول الله | ২ বার |
حي على الصلاة | حي على الصلاة | ২ বার |
حي على الفلاح | حي على الفلاح | ২ বার |
الله اكبر – الله اكبر | ২ বার | |
لا اله الا الله | ১ বার |
(মুসলিম: ৭২৮)
আযানের বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ
আরবী শব্দ | উচ্চারণ (ও অর্থ) |
الله اكبر | আল্লা-হু আকবার (আল্লাহ সবচেয়ে মহান) |
اشهد ان لا اله الا الله | আশহাদু আল্ লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ। (আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই) |
اشهد ان محمد الرسول الله | আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ (আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (স) আল্লাহর রাসূল)। |
حي على الصلاة | হাইয়্যা আলাস্ সলা-হ (এসো নামাযের জন্য) |
حي على الفلاح | হাইয়্যা আলাল ফালা-হ (এসো মুক্তির জন্য)। |
الله اكبر | আল্লা-হু আকবার (আল্লাহ সবচেয়ে মহান)। |
لا اله الا الله | লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ (আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য মা’বুদ নেই)। |
الصلاة خير من النوم | আস্-সলা-তু খাইরুম মিনান নাওম্ [শুধু ফজরের সালাতে] (ঘুমের চেয়ে সালাত উত্তম) |
ক. আযানের পর দরূদ শরীফ পড়া সুন্নাত। (মুসলিম: ৭৩৫)।
“হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ (স) এবং তাঁর বংশধরের উপর রহমত বর্ষণ করো, যেমন রহমত বর্ষণ করেছ ইবরাহীম (আ) ও তাঁর বংশধরের উপর, নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসিত ও সম্মানিত। হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ (স) এবং তাঁর বংশধরের ওপর বরকত নাযিল করো, যেমন বরকত নাযিল করেছ ইবরাহীম (আ) ও তাঁর বংশধরের উপর। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসিত ও সম্মানিত।” (বুখারী: ৩৩৭০)
(খ) অতঃপর এ দু’আটি পড়বে।
এটাকে বলা হয় অসীলার দু’আ। জাবির (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (স) বলেন, আযান শুনে যে ব্যক্তি এ দু’আ পড়ে, তার জন্য আমার শাফাআত ওয়াজিব হয়ে যায়। (বুখারী: ৬১৪)
“এসব পরিপূর্ণ দু’আ ও প্রতিষ্ঠিত নামাযের প্রভু হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ (স)-কে জান্নাতের ওয়াসীলা নামক মনযিলটি ও সম্মান দান কর এবং তুমি তাকে সেই (মাকামে মাহমূদ অর্থাৎ) প্রশংসিত জায়গায় পৌছে দিও যা তাঁকে দেওয়ার জন্য তুমি ওয়াদা করেছ।” (বুখারী: ৬১৪) রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, যে ব্যক্তি আযান শুনে এ দু’আ পড়বে কিয়ামতের দিন তার জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব হয়ে যাবে।(বুখারী: ৬১৪)। তবে সাবধান! কেউ কেউ আযানের দু’আর সাথে কিছু বাড়তি শব্দ যোগ করে। যেমন‘ওয়াদ্দারাজাতা রাফী’আহ্, বা অবযুকনা শাফাআতাহু ইয়াওমা কিয়ামাহ্’ বা ‘ইন্নাকা লাতুখলিফুল মীয়াদ’ – যা ঠিক নয়। কেননা, এসব বাক্য বলার পক্ষে কোন সহীহ হাদীস নেই। অতএব, হাদীসে যেভাবে আছে সেভাবেই আমল করুন।
সূত্র: প্রশ্নোত্তরে ফিকহুল ইবাদাত
লেখক: অধ্যাপক মোঃ নূরুল ইসলাম