মহিলা অঙ্গন

মেয়েদেরকে প্রাইভেট পড়ানোর বিধান


প্রশ্ন: আমি একজন ভার্সিটির ছাত্র। আমি তিন জন ছাত্রীকে প্রাইভেট পড়াই। ওরা তিন বোন। তিনজনকে এক সাথেই পড়াই। আপাতত অন্য কোনও টিউশন না পাওয়ার কারণে ওদেরকে পড়াতে হচ্ছে। আমি যদি এখন এই টিউশনি ছেড়ে দেই তাহলে আমার পরিবারে আর্থিক সংকট দেখা দিতে পারে। কারণ আমার এই টিউশন ফি থেকে বাসায় সহযোগিতা করতে হয়।এমন পরিস্থিতিতে কি আমার টিউশন টা করানো জায়েজ হবে? আমার উপার্জন কি হারামের মধ্যে পরছে?

উত্তর:

আল্লাহ তাআলা আপনার অর্থনৈতিক সমস্যা দূরভীত করেন এবং হালাল পন্থায় উপার্জনের মাধ্যমে পারিবারিক সচ্ছলতা দান করেন। আমীন।

প্রিয় ভাই, মনে রাখতে হবে, ইসলাম ফিতনার দিকে টেনে নিয়ে পারে এমন সকল পথ থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দেয়। আর এ কথায় কোনও সন্দেহ নাই যে, কোন পুরুষের জন্য বড়, বুঝমান বা প্রাপ্ত বয়স্ক গাইরে মাহরাম মেয়েদেরকে সামনাসামনি প্রাইভেট পড়ানো নি:সন্দেহে বিশাল ফিতনা এবং দ্বীন ও চারিত্রিক দিক থেকে মারাত্মক ক্ষতির কারণ। যে পড়ায় আর যারা পড়ে উভয়ের জন্য তা সমানভাবে সত্য। শুধু প্রাইভেট পড়ানো নয় বরং স্কুল, মাদরাসা, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, কোচিং সেন্টার ইত্যাদিতে পুরুষ শিক্ষক দ্বারা মেয়েদেরকে এবং মহিলা শিক্ষক দ্বারা ছেলেদেরকে পড়ানো মারাত্মক ফিতনার কারণ। চতুর্দিকে ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকের মাধ্যমে নারী কেলেঙ্কারী এবং এ জাতীয় ফেতনা-ফ্যাসাদ ও বিভিন্ন দুর্ঘটনার অভাব নাই-সচেতন মানুষ মাত্রই তা অবগত। সুতরাং ইসলামের দৃষ্টিতে এভাবে পড়ানো জায়েজ নাই।

সৌদি আরবের স্থায়ী ফতোয়া কমিটিতে বলা হয়েছে:
لا يجوز للرجل تدريس البنات مباشرة ؛ لما في ذلك من الخطر العظيم والعواقب الوخيمة
“কোন পুরুষের জন্য মেয়েদেরকে সরাসরি (সামনাসামনি) পাঠদান করা বৈধ নয়। কারণ এতে রয়েছে বিশাল বিপদ ও ভয়াবহ পরিণতি।” [ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ১২/১৪৯]

সুতরাং তা বাদ দিয়ে হয় কেবল ছেলেদের প্রাইভেট পড়ানো অথবা বিকল্প পন্থায় হালাল উপার্জনের উৎস অনুসন্ধান করা কর্তব্য। কেউ যদি আল্লাহকে ভয় করে হারাম থেকে দূরে থাকতে চায় নিশ্চয় তিনি তাকে তিনি সাহায্য করেন এবং তার জন্য উত্তম পন্থায় রিজিকের ব্যবস্থা করেন। আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَمَن يَتَّقِ اللَّـهَ يَجْعَل لَّهُ مَخْرَجًا وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ ۚ وَمَن يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّـهِ فَهُوَ حَسْبُهُ ۚ إِنَّ اللَّـهَ بَالِغُ أَمْرِهِ ۚ قَدْ جَعَلَ اللَّـهُ لِكُلِّ شَيْءٍ قَدْرًا
“আর যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্যে নিষ্কৃতির পথ করে দেন এবং তাকে তার ধারণাতীত স্থান থেকে রিজিক দেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে তার জন্যে তিনিই যথেষ্ট। আল্লাহ তার কাজ পূর্ণ করবেন। আল্লাহ সবকিছুর জন্যে একটি পরিমাণ স্থির করে রেখেছেন।” (সূরা তালাক/২ ও ৩)

❑ অর্থনৈতিক প্রয়োজন মেটানোর স্বার্থে মেয়েদেরকে প্রাইভেট পড়ানো ছাড়া বিকল্প না থাকলে…

যদি নিজের বা পরিবারের আর্থিক সমস্যা লাঘব ও প্রয়োজন মেটানোর স্বার্থে মেয়েদেরকে প্রাইভেট পড়ানো জরুরি হয় এবং এ ছাড়া বিকল্প কোনও পথ না পাওয়া যায় তাহলে সাময়িকভাবে তাদেরকে পড়ানো জায়েজ হবে। তবে কতিপয় শর্ত সাপেক্ষে। যেমন:
◗ ক. পর্দার অন্তরাল থেকে তাদেরকে পড়াতে হবে। তাদেরকে আপনি দেখবেন না; তারাও আপনাকে দেখবে না। মেয়েরা হিজাব পরিহিত হলেও সামনাসামনি বসে তাদেরকে পড়ানো জায়েজ হবে না।
◗ খ. কথা বলার সময় মেয়েরা কোমল কণ্ঠ পরিহার করবে।
◗ গ. একান্ত দরকার ছাড়া কথা বলবে না।
◗ ঘ. হাসি-মজাক ও অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা অবশ্যই পরিত্যাজ্য।
আল্লাহ তাআলা নারীদেরকে প্রয়োজনে পুরুষদের সাথে কথার বলার অনুমিত দিয়েছেন। তবে এ ক্ষেত্রে কোমল কণ্ঠ পরিহার করতে নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন:
إِنِ اتَّقَيْتُنَّ فَلَا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الَّذِي فِي قَلْبِهِ مَرَضٌ وَقُلْنَ قَوْلًا مَّعْرُوفًا
“যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তবে পরপুরুষের সাথে কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলো না। অন্যথায় কুবাসনা করবে যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে। আর তোমরা সঙ্গত কথাবার্তা বলবে।” (সূরা আহযাব: ৩২)

◗ ঙ. কখনো একাকী একজনকে পড়ানো যাবে না। কারণ কোন পরপুরুষ ও পরনারী নির্জন হলে শয়তান উভয়ের মনে কু প্রবৃত্তি কামভাবকে উসকিয়ে দেয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অবশ্য সাথে তার একাধিক বোন থাকলে তুলনা মূলকভাবে এ আশঙ্কা কিছুটা কম থাকে।
হাদিসে বর্ণিত আছে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«ألا لاَ يَخْلُوَنَّ رَجُلٌ بِامْرَأَةٍ إِلَّا كَانَ ثَالِثَهُمَا الشَّيْطَانُ»
“সাবধান! কোন পুরুষ কোনও মহিলার সাথে একান্তে নির্জনে গেলেই তাদের সাথে তৃতীয় জন হবে শয়তান।” (সহিহুল জামে ২৫৪৬-আলবানী)

তিনি আরও বলেন:
مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَلا يَخْلُوَنَّ بِامْرَأَةٍ لَيْسَ بَيْنَهُ وَبَيْنَهَا مَحْرَمٌ
“যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং শেষ দিবসের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন কোন পরনারীর সাথে নির্জন না হয় যখন তার মাঝে এবং সে নারীর মাঝে কোন মাহরাম পুরুষ না থাকে।” (সহিহুত তারগীব: ১৯০৯-আলবানী)

যাহোক, এ পরিস্থিতিতে সাময়িকভাবে পড়ানো বৈধ হলেও মহান আল্লাহর নিকট হালাল চাকুরী বা কাজের জন্য দুআ করতে হবে এবং সাধ্যানুযায়ী অনুসন্ধান চালিয়ে যেতে হবে। যখনই তা জুটে যাবে তখনই এই প্রাইভেট পড়ানো বন্ধ করে হালাল কর্মে যুক্ত হতে হবে।

দুআ করি, আল্লাহ যেন আমাদেরকে ফেতনার স্থান থেকে সরিয়ে হালাল পন্থায় অর্থ উপার্জনের ব্যবস্থা করে দেন এবং সব ধরণের ফিতনা-ফ্যাসাদ থেকে রক্ষা করেন। আমীন। নিশ্চয় আল্লাহ তাওফিক দানকারী।
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬◄❖►▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
জুবাইল, সৌদি আরব

➥ লিংকটি কপি অথবা প্রিন্ট করে শেয়ার করুন:
পুরোটা দেখুন

আবু রায়হান

আসসালামুআলাইকুম, আমি একজন প্রাথমিক পর্যায়ের ছাত্র। আমি এটা মনে করিনা যে, আমার টাই সঠিক আর বাকি সবারটা ভুল। আমি এই পথে হাটছি, আমি আপনার কাছে দো'আ প্রার্থী, আল্লাহ তাআলা যেন আমাকে অনেক দূর অগ্রসর হওয়ার ও বড় আলেম হয়ে ইসলামের খেদমত করার তাওফিক দান করেন এবং সঠিকটা বুঝে সেই অনুযায়ী আমল করার তাওফিক দান করেন। আর আমার ভুল ভ্রান্তিগুলো ধরিয়ে দিবেন।
এছাড়াও পড়ে দেখুন
Close
Back to top button