দু'আ, যিকির ও ঝাড়ফুঁক

জিনগত ত্রুটিতে আক্রান্ত নারীর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া এবং বিকলাঙ্গ সন্তান প্রসবের আশংকায় গর্ভ-নিরোধ করার বিধান

প্রশ্নঃ জনৈক নারী শারীরিক বিকৃতি নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছেন। হতে পারে এটি জিনগত ত্রুটি থেকে। তিনি জিনগত টেস্ট করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যাতে করে রোগের প্রকৃতি জানা যায় এবং এটি বংশগতভাবে সন্তানদের মাঝে সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা তা জানা যায়। এ ত্রুটি তাকে অন্যান্য রোগে আক্রান্ত করবে কিনা সে জন্যেও আগাম রোগ-নির্ণয় করা দরকার। তাই এই টেস্ট করার বিধান কী? যদি জিনগত ত্রুটি পাওয়া যায় সেক্ষেত্রে এ নারীর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া ও গর্ভধারণ করার বিধান কী? উল্লেখ্য, এটি বংশগতভাবে সংক্রমিত হওয়ার বিষয়টি সুনিশ্চিত নয়। কিন্তু, আল্লাহ্‌ যদি বংশগতভাবে শিশুর সংক্রমিত হওয়া তাকদীরে রাখেন সেক্ষেত্রে শিশু বড় ধরণের বিকৃতির শিকার হবে। যার ফলে বুদ্ধিগত কিংবা শারীরিক প্রতিবন্ধিতাও ঘটতে পারে? তাই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ না হওয়া কিংবা গর্ভধারণ না করা কি যথাযথ পদক্ষেপ? বিয়ের প্রস্তাব-দাতাকে কি এই শারীরিক বিকৃতির বিষয়টি জানাতে হবে? ‘বংশগতভাবে এ রোগ সন্তানদের মাঝে সংক্রমিত হতে পারে’ মর্মে পাত্রপক্ষকে বিষয়টি জানানোর বিধান কী?

উত্তরঃ আলহামদু লিল্লাহ।

এক:


রোগের প্রকৃতি জানার জন্য এবং এটি বংশগতভাবে সংক্রমিত হওয়া কিংবা অন্য কোন রোগ সৃষ্টি করার সম্ভাবনা কতটুকু তা জানার জন্য জেনেটিক-টেস্ট করতে কোন আপত্তি নেই। যেহেতু এতে রয়েছে কল্যাণ লাভ করা, ক্ষতি দূর করা এবং চিকিৎসা গ্রহণ করা; যা গ্রহণ করা শরিয়ত অনুমোদিত।
বিয়ের পূর্বে মেডিকেল টেস্ট করা শরিয়তসম্মত হওয়ার বিষয়টি জানতে 104675 নং প্রশ্নোত্তর দেখুন।


দুই: 


ধরে নিই, জিনগত ত্রুটি ধরা পড়ল সেক্ষেত্রেও এ নারীর জন্য বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া জায়েয। এমনকি যদি বংশগতভাবে রোগটি সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তা সত্ত্বেও। তবে, শর্ত হচ্ছে পাত্রকে রোগের বিষয়ে অবহিত করতে হবে। 
বিয়ে জায়েয হওয়ার বিষয়টি এ দিক থেকে: বিয়ের মূল বিধান হচ্ছে– বৈধ হওয়া ও বিয়ের ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করা; যাতে করে বিয়ের মাধ্যমে চারিত্রিক পবিত্রতা, মানসিক প্রশান্তি ও ভালবাসা অর্জিত হয়।

আর গর্ভধারণ বৈধ হওয়ার বিধান এ দিক থেকে: যেহেতু বিয়ের গুরুত্বপূর্ণ একটি উদ্দেশ্য হচ্ছে– গর্ভধারণ। সন্তানের রোগাক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাটি এ উদ্দেশ্যের সাথে সাংঘর্ষিক নয়। যেহেতু সেটা আল্লাহ্‌র জ্ঞানে রয়েছে। হতে পারে সম্পূর্ণ সুস্থ সন্তান জন্মগ্রহণ করবে। তবে, যদি প্রবল ধারণা অনুযায়ী সন্তান বিকলাঙ্গ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে সেক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী সন্তান গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন এবং ভ্রূণের বিকলাঙ্গতা সাব্যস্ত হলে তারা ভ্রূণ নষ্টও করে ফেলতে পারেন; তবে শর্ত হচ্ছে রূহ আসার আগেই তা করতে হবে। অর্থাৎ গর্ভধারণের বয়স ১২০ দিন হওয়ার আগে করতে হবে।


আরও জানতে দেখুন: 263741 নং প্রশ্নোত্তর।
শাইখ বিন বায (রহঃ) কে জিজ্ঞেস করা হয়: আমি একজন মুসলিম নারী। আলহামদু লিল্লাহ্‌ আমি ফরয আমলগুলো পালন করি; যেসব আমল আমার প্রতিপালক আমার উপর ফরয করেছেন; যেমন- নামায, রোযা, যাকাত। কিন্তু, আমি গর্ভধারণ স্থগিত করেছিলাম। যে সময়ে আমার স্বামী যক্ষ্মারোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন সে সময়। এটা প্রায় দশ বছর সময়কাল হবে। এরপর আমার মাসিক স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যায়। আমার এই কর্মের মাঝে এমন কিছু আছে কি যাতে করে আল্লাহ্‌ আমার উপর নারাজ হবেন? কারণ আমার সন্তানেরা হেমিপেরেসিসে আক্রান্ত হত। তাদের মধ্যে কেউ মারা যেত। কেউ বেঁচে থাকলেও এই রোগে ভুগত। দয়া করে, আমাদেরকে অবগত করবেন আল্লাহ্‌ আপনাদেরকে অবগত করুন।

তিনি জবাব দেন:
যদি আপনি স্বামীর সন্তুষ্টি সাপেক্ষে গর্ভনিরোধ করে থাকেন তাহলে এতে কোন গুনাহ হয়নি। যদি আপনি স্বামীর সন্তুষ্টি বা সম্মতি সাপেক্ষে করে থাকেন তাহলে আমরা আশা করছি আপনার কোন গুনাহ হয়নি। আর যদি আপনি স্বামীর অসন্তুষ্টি বা অজান্তে করে থাকেন তাহলে আপনার কর্তব্য হচ্ছে তাওবা করা, ইস্তিগফার করা এবং কৃত কর্মের জন্য অনুতপ্ত হওয়া। আলহামদু লিল্লাহ্‌।[সমাপ্ত; ফাতাওয়া নুরুন আলাদ দারব (২১/৪২১)]

বিয়ের প্রস্তাব-দাতাকে এই ত্রুটির কথা জানানো আবশ্যক। কেননা অগ্রগণ্য মতানুযায়ী যা কিছু দাম্পত্য জীবনের উপর কিংবা সন্তান-ধারণের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে কিংবা স্বামী-স্ত্রীর একজনকে অপরজন থেকে দূরে রাখে এগুলো এমন ত্রুটি যা অবহিত করা আবশ্যক।

আরও জানতে দেখুন 111980 নং প্রশ্নোত্তর।
যদি পাত্র রোগের ব্যাপারে জানার পর বিয়েতে সম্মত হয় তখন যে ধরণের রোগ-ই হোক না কেন তাতে কোন দোষ নেই।

আরও জানতে দেখুন 133329 নং প্রশ্নোত্তর।

আমরা আল্লাহ্‌র কাছে প্রার্থনা করছি তিনি যেন আমাদের বোনকে সুস্থ করে দেন, নিরাময় দান করেন, নেক স্বামী ও নেককার সন্তানসন্ততি দান করেন।


আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব

➥ লিংকটি কপি অথবা প্রিন্ট করে শেয়ার করুন:
পুরোটা দেখুন

Mahmud Ibn Shahid Ullah

"যে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়, সৎকর্ম করে এবং বলে, আমি একজন মুসলিম, তার কথা অপেক্ষা উত্তম কথা আর কার?" আমি একজন তালিবুল ইলম। আমি নিজেকে ভুলের উর্ধ্বে মনে করি না এবং আমিই হক্ব বাকি সবাই বাতিল এমনও ভাবিনা। অতএব, আমার দ্বারা ভুলত্রুটি হলে নাসীহা প্রদানের জন্যে অনুরোধ রইল। ❛❛যখন দেখবেন বাত্বিল আপনার উপর সন্তুষ্ট, তখন বুঝে নিবেন আপনি ক্রমের হক্ব থেকে বক্রপথে ধবিত হচ্ছেন।❞
এছাড়াও পড়ে দেখুন
Close
Back to top button