দু'আ, যিকির ও ঝাড়ফুঁক

মানসিক প্রশান্তি অর্জনের উপায় সমূহ:*


❖ ১) ইখলাস বা একনিষ্ঠতা সহকারে আল্লাহর ইবাদত করা:

আল্লাহ তাআলা বলেন:

ﻭَﻣَﺎ ﺃُﻣِﺮُﻭﺍ ﺇِﻟَّﺎ ﻟِﻴَﻌْﺒُﺪُﻭﺍ ﺍﻟﻠَّـﻪَ ﻣُﺨْﻠِﺼِﻴﻦَ ﻟَﻪُ ﺍﻟﺪِّﻳﻦَ

“তাদেরকে একমাত্র এ নির্দেশই প্রদান করা হয়েছে যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর এবাদত করবে।”

(সূরা বাইয়েনাহ: ৫)

ইখলাসের আলামত:

● ক) জীবনের সব ক্ষেত্রে আল্লাহর সাহায্য অনুভব করা।

আল্লাহর সাহায্যের কারণে একজন ব্যক্তির ইবাদত-বন্দেগী ও কার্যক্রম ত্রুটি-বিচ্যুতি ও পদস্খলন থেকে রক্ষা পায়।

ইবনুল জাউযী বলেন:

ﺇﻧﻤﺎ ﻳﺘﻌﺜﺮ ﻣﻦ ﻟﻢ ﻳﺨﻠﺺ

“যার মধ্যে ইখলাস নেই তারই পদস্খলন ঘটে।”

(সায়দুল খাতের, ১:১১৯)

● খ) ইবাদতে পর্যাপ্ত সময় ও শ্রম ব্যয় করা।

● গ) গোপনে ইবাদত করার আগ্রহ থাকা।

তবে যে সব ইবাদত জনসম্মুখে করতে হয় সেগুলোর কথা ভিন্ন।

যেমন জামাআতে সালাত, আল্লাহর পথে দাওয়াত, জিহাদ ইত্যাদি।

● ঘ) অতি যত্ন সহকারে সুন্দরভাবে ইবাদত করা এবং এ ক্ষেত্রে ত্রুটি-বিচ্যুতি সংশোধনে আন্তরিক হওয়া।

● ঙ) আল্লাহর দরবারে ইবাদত গৃহীত না হওয়ার ভয় থাকা।

❖ ২) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অনুসরণ করা:

নফসে মুতমাইন্নার অধিকারী হতে হলে ইবাদত-বন্দেগী, লেনদেন, চরিত্র, পারিবারিক, সামাজিক তথা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নাহ ও আদর্শের আলোকে ঢেলে সাজাতে হবে।

নিজের জানমাল,সন্তান-সন্ততি, পিতামাতা ও সকল প্রিয়জন থেকে তার ভালবাসাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

তাহলেই কেবল পূর্ণ মুমিন হওয়ার সম্ভব।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

ﻟَﺎ ﻳُﺆْﻣِﻦُ ﺃَﺣَﺪُﻛُﻢْ ﺣَﺘَّﻰ ﺃَﻛُﻮﻥَ ﺃَﺣَﺐَّ ﺇِﻟَﻴْﻪِ ﻣِﻦْ ﻭَﻟَﺪِﻩِ ﻭَﻭَﺍﻟِﺪِﻩِ ﻭَﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ﺃَﺟْﻤَﻌِﻴﻦَ

“তোমাদের কেউ প্রকৃত ঈমানদার হতে পারবে না যে পর্যন্ত আমি তার নিকট তার পিতা পুত্র এবং অন্য সকল লোক হতে অধিক প্রিয় না হই।”

(বুখারী ও মুসলিম, আনাস রা. হতে বর্ণিত)

আর এতে কোন সন্দেহ নাই যে, যে হৃদয়ে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ভালবাসা সকল ভালবাসার উপরে স্থান পাবে সে হৃদয় হবে সবচেয়ে প্রশান্ত ও স্থির এবং তার জন্যই অপেক্ষা করছে উপরোক্ত সুসংবাদ।

❑ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে অনুসরণের আলামত:

● ক) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নত সম্পর্কে জ্ঞানার্জন এবং গ্রহণে উদগ্রীব থাকা।

● খ) সীরাত তথা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জীবন-চরিত সম্পর্কিত বই-পুস্তক অধ্যয়ন করা।

● গ) বিদআত থেকে সাবধান থাকা।

● ঘ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অনুসরণ-অনুকরণে অগ্রণী থাকা।

❖ ৩) আল্লাহ তাআলাকে গভীরভাবে ভালবাসা:

আল্লাহ তাআলাকে ভালবেসে যখন কেউ আল্লাহর রঙ্গে জীবন রাঙ্গিয়ে দিতে পারে তখন সকল বিপদ-মুসিবতে সবর করা তার জন্য সহজ হয়ে যায়।

সর্বাবস্থায় সে তাঁর প্রতি সুধারণা পোষণ করে। শত কষ্ট হাসিমুখে বরণ করে।

বিপদে ধৈর্যের পরিচয় দেয় আর সুখ ও আনন্দের সংবাদে কৃতজ্ঞতা আদায় করে।

এসব কারণে তার মন থেকে অস্থিরতা, হাহাকার, না পাওয়ার বেদনা দূরভিত হয় যায়।

মন ভরে উঠে পরম প্রশান্তিতে।

❑ আল্লাহকে ভালবাসার কতিপয় আলামত:

● ক) নিভৃতে আল্লাহর ইবাদত করতে ভালো লাগা।

● খ) আল্লাহর বাণী মহাগ্রন্থ আল কুরআন তিলাওয়াত ও শ্রবণ করতে আনন্দ পাওয়া।

● গ) নামায, রোযা, দান-সদকা ইত্যাদি ইবাদতে তৃপ্তি অনুভব করা।

● ঘ) তাসবীহ, তাহলীল, যিকির, দুআ, ইস্তিগফার ইত্যাদির মাধ্যমে জিহ্বাকে সিক্ত রাখা।

● ঙ) আল্লাহর পছন্দ ও অ পছন্দনীয় বিষয়ে মানসিকভাবে পূর্ণ সম্মতি থাকা।

● চ) কোন ইবাদত ও নেকির কাছে ছুটে গেলে মনে কষ্ট অনুভূত হওয়া এবং আফসোস করা।

● ছ) আল্লাহর আদেশ-নিষেধ লঙ্ঘিত হতে দেখলে মনে প্রচণ্ড রাগ সৃষ্টি হওয়া।

❖ ৪) আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্টি:

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

“ ﺫَﺍﻕَ ﻃَﻌْﻢَ ﺍﻟْﺈِﻳﻤَﺎﻥِ ﻣَﻦْ ﺭَﺿِﻲَ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ ﺭَﺑًّﺎ ﻭَﺑِﺎﻟْﺈِﺳْﻠَﺎﻡِ ﺩِﻳﻨًﺎ ﻭَﺑِﻤُﺤَﻤَّﺪٍ ﺭَﺳُﻮﻟًﺎ

“ওই ব্যক্তিই ঈমানের স্বাদ গ্রহণ করবে যে ব্যক্তি আল্লাহকে প্রতিপালক,ইসলামকে দ্বীন (জীবন ব্যবস্থা) এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রাসুল হিসেবে সন্তুষ্ট চিত্তে মেনে নিল।”

(সহীহ মুসলিম, কিতাবুল ঈমান, আনাস রা. হতে বর্ণিত)

যে আল্লাহ তাআলাকে প্রতিপালক হিসেবে মনে-প্রাণে বিশ্বাস করবে স্বাভাবিকভাবে তার অন্তরে অস্থিরতা ও দু:শ্চিন্তা স্থান পাবে না।

কারণ সে জানে মহান আল্লাহ অত্যন্ত প্রজ্ঞাবান ও কুশলী আর তার প্রতিটি সিদ্ধান্তই প্রজ্ঞাপূর্ণ।

তাই তার ভাল-মন্দ সকল সিদ্ধান্তে সন্তুষ্টি থাকার মাধ্যমেই হৃদয়ে জাগ্রত হয় অনাবিল প্রশান্তি।

❖ ৫) সত্যবাদিতা:
সত্যবাদিতার মধ্যেই রয়েছে প্রকৃত প্রশান্তি ।

পক্ষান্তরে মিথ্যায় রয়েছে মানসিক অশান্তি, সন্দেহ, সংশয় ও অস্থিরতা।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

ﺍﻟﺼِّﺪْﻕَ ﻃُﻤَﺄْﻧِﻴﻨَﺔٌ ، ﻭَﺇِﻥَّ ﺍﻟْﻜَﺬِﺏَ ﺭِﻳﺒَﺔٌ

“সত্য হল প্রশান্তি আর মিথ্যা হল সংশয়।” (মুসনাদ আহমদ, মুস্তাদরাক হাকিম, মিশকাত, আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন)

সত্যবাদিতার তিনটি ক্ষেত্রে রয়েছে।

যথা:

● ক) আল্লাহর সাথে সত্যবাদিতা:
প্রশান্ত হৃদয়ের অধিকারী মুমিন হবে-

– কথায় সত্যবাদী। সুতরাং তার মুখ থেকে কখনও অসত্য কথা বের হবে না।

– আচরণে সত্যবাদী। সুতরাং সে হঠাৎ করেই রঙ বদলাবে না বা ধোঁকাবাজি ও মুনাফেকি করবে না।

– কর্মে সত্যবাদী। সুতরাং সে আমল করবে ইখলাসের সাথে এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দেখানো পদ্ধতির আলোকে।

● খ) বান্দাদের সাথে সত্যবাদিতা: আল্লাহ ও তার মাঝে যে চেহারা থাকে মানুষের সাথে উঠবস ও লেনদেনের সময় তার চেয়ে ভিন্ন চেহারা নিয়ে হাজির হবে না।

● গ) নিজের সাথে সত্যবাদিতা: যা সে বিশ্বাস করে তা সে কর্মে বাস্তবায়ন করে।

নিজেকে সংশোধন করে, আত্ম সমালোচনা করে এবং প্রবৃত্তির টানে ছুটে বেড়ায় না আর একান্ত একাকীত্বেও আল্লাহর ভয় হৃদয়ে জাগ্রত রেখে হারাম থেকে দূরে থাকে।

❖❖ ৬) তাকওয়া অবলম্বন:

তাকওয়া বা আল্লাহর ভয় তার জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রকে নিয়ন্ত্রণ করে।

যার কারণে সে আল্লাহর ইবাদত করে; অবাধ্যতা করে না। কৃতজ্ঞতা আদায় করে; অকৃতজ্ঞ হয় না।

আল্লাহকে স্মরণ করে; তাকে ভুলে থাকে না আর বেঁচে থাকে বড়-ছোট সকল প্রকার পাপাচার থেকে।

স্বাভাবিকভাবে মানুষ যখন আল্লাহর ভয় হৃদয়ে জাগ্রত রাখে তখন সে যেমন আল্লাহর অধিকার লঙ্ঘন করে না ঠিক তেমনি বান্দার হকও নষ্ট করে না।

এতে হৃদয়ে বিরাজ করে এক অভূতপূর্ব তৃপ্তি ও অবর্ণনী প্রশান্তি।

পক্ষান্তরে আল্লাহর দাসত্ব থেকে বের হয়ে গেলে এবং বান্দার অধিকারে হস্তক্ষেপ করলে সমাজে বিশৃংখলা সৃষ্টি হয়।

যার প্রভাবে অপরাধীর হৃদয়ে অশান্তির দাবানল জ্বলতে থাকে আর অস্থিরতা ও দু:শ্চিন্তা তাকে গ্রাস করে।

❖ ৭) সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ: মানুষকে কল্যাণের পথে আহ্বান করা, আল্লাহ তাআলা যে কাজে রাগ করেন সে কাজ থেকে সতর্ক করা এবং এ পথে ধৈর্য ধারণ করা।

❖ ৮) মানুষের কল্যাণে কাজ করা, গরীব, অসহায়, বিধবা ও এতিমদের সাহায্য করা ইত্যাদি।

❖ ৯) সুন্দর চরিত্র: হাসিমুখে থাকা,দেখা হলে সালাম দেয়া, মানুষের সুখে সুখী হওয়া, দু:খে দুখী হওয়া, প্রতিবেশী ও মেহমানকে সম্মান করা ইত্যাদি।

❖ ১০) অধিক পরিমানে আল্লাহর যিকির করা। আল্লাহ বলেন:

ﺃَﻟَﺎ ﺑِﺬِﻛْﺮِ ﺍﻟﻠَّـﻪِ ﺗَﻄْﻤَﺌِﻦُّ ﺍﻟْﻘُﻠُﻮﺏُ

“জেনে রাখ, আল্লাহর যিকির দ্বারাই অন্তর সমূহ শান্তি পায়।”

(সূরা রাদ: ২৮)

কুরআন তিলাওয়াত সবচেয়ে বড় যিকির। তারপর সকাল সন্ধ্যার দুআ-যিকির, বিভিন্ন কাজের আলাদা আলাদা দুআ, পাঁচওয়াক্ত সালাত, অন্যান্য তাসবীহ-তাহলীল, ইস্তিগফার ইত্যাদি অধিক পরিমানে পড়ার চেষ্টা করতে হবে।

তাহলে ইনশাআল্লাহ মনে অভাবনীয় প্রশান্তি অর্জিত হবে ইনশাআল্লাহ।

আল্লাহ তাওফিক দান করুন।

আমীন।

-আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল

➥ লিংকটি কপি অথবা প্রিন্ট করে শেয়ার করুন:
পুরোটা দেখুন

মাহবুব বিন আনোয়ার

❝ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া কোন হক ইলাহ নেই,এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বান্দা ও রাসূল।❞ আমি যদিও একজন জেনারেল পড়ুয়া ছাত্র তাই আমার পক্ষে ভুল হওয়া অসম্ভব কিছু না, আমি ইসলামী শরীইয়াহ বিষয়ক জ্ঞান অর্জনের চেষ্টা করছি এবং এর সাথে মানুষ কে রাসুল (সা:) এর হাদিস এবং আমাদের সালফে সালেহীনদের আদর্শের দিকে দাওয়াত দেওয়ার চেষ্টা করি। যদি আমার কোন ভুল হয় ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন এবং সেটা আমাকে জানাবেন যাতে আমি শুধরে নিতে পারি।
এছাড়াও পড়ে দেখুন
Close
Back to top button