দু'আ, যিকির ও ঝাড়ফুঁক

হজ্ব ও উমরার যে সময়গুলোতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দোয়া করেছেন

প্রশ্ন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন হজ্ব ও উমরা আদায় করেছেন তখন কোন কোন সময়ে তিনি দোয়া করেছেন?

উত্তরঃ আলহামদু লিল্লাহ্।

প্রিয় প্রশ্নকারী ভাই,

জেনে রাখুন- আল্লাহ আপনাকে তাওফিক দিন- হজ্ব ও উমরা পালনকারী আল্লাহর মেহমান ও আল্লাহর কাছে আগত প্রতিনিধি। আল্লাহ তাদেরকে ডেকে পাঠিয়েছেন কিছু দেয়ার জন্য, পুরস্কৃত করার জন্য। সহিহ হাদিসে এসেছে- “আল্লাহর রাস্তায় লড়াইকারী, হজ্ব ও উমরা পালনকারী আল্লাহর প্রতিনিধি। তিনি তাদেরকে ডেকেছেন তারা তাঁর ডাকে সাড়া দিয়েছে। তারা তাঁর নিকট প্রার্থনা করেন তিনি তাদেরকে দান করেন।”[সুনানে ইবনে মাজাহ, দেখুন: সিলসিলা সহিহা (১৯২০)]

আল্লাহ তাআলার সবচেয়ে বড় দান হচ্ছে- তারা ফিরে যাবে সেদিনের মত যেদিন তাদের মা তাদেরকে প্রসব করেছিল অথচ তারা এসেছিল গুনাতে মুহ্যমান হয়ে, দোষত্রুটিতে ভারাক্রান্ত হয়ে।আল-করিম, আর-রহিম (সুমহান, অসীম দয়ালু) এর দরজায় অবস্থান নেয়ার পর তারা সে স্থান ত্যাগ করবে গুনাহ থেকে হালকা হয়ে, আল্লাহর রহমত ও সন্তুষ্টিতে অভিষিক্ত হয়ে।

সহিহ হাদিসে এসেছে-“যে ব্যক্তি হজ্ব আদায় করল কিন্তু পাপ কথা বা কাজ করল না সে তার গুনাহ থেকে এভাবে ফিরে আসবে যেদিন তার মা তাকে প্রসব করেছে।”পবিত্রময় সেই সত্তা, সুমহান তার যাত যিনি বায়তুল্লাহর উদ্দেশ্যে একজন মুসলমানের গুটিকয়েক পদক্ষেপের বিনিময়ে পাপে ভরা আমলনামাগুলো ভাঁজ করে রাখেন। কতইনা মহৎ এই সফর! এই সফর হতে যে ব্যক্তি বঞ্ছিত হয়তার আর কি পাওয়ার থাকে! আর যে ব্যক্তিরএই সফরের নসীব হয় সে এমন কিই-বা হারায়!

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “মাবরুর হজ্বের প্রতিদান হচ্ছে জান্নাত।” হজ্বের মধ্যে যে সময়গুলোতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দোয়া করেছেন সেগুলো হচ্ছে-

১. সাফা পাহাড়ে দোয়া করা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিভাবে হজ্ব আদায় করেছেনসে বর্ণনা দিয়ে জাবির (রাঃ) যে লম্বা একটা হাদিস বর্ণনা করেছেন তাতেআছে- তিনি সাফা পাহাড় দিয়ে শুরু করেছেন। সাফা পাহাড়ের একেবারে শীর্ষে উঠেছেন যাতে কাবাকে দেখতে পান। এরপর কিবলামুখি হন এবং আল্লাহর একত্ববাদ ও মহত্বের ঘোষণা দিয়ে বলেন:

لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ أَنْجَزَ وَعْدَهُ وَنَصَرَ عَبْدَهُ وَهَزَمَ الأَحْزَابَ وَحْدَهُ.

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহ। লাহুল মুলকু, ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদা, আনজাযা ওয়াদাহ, ওয়া নাসারা আবদাহ, ওয়া হাযামাল আহযাবা ওয়াহদা।

অর্থ- “নেই কোন উপাস্য এক আল্লাহ ব্যতীত। তাঁর শরীক নেই। রাজত্ব তাঁর জন্য। প্রশংসা তাঁর জন্য। তিনি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান। নেই কোন উপাস্য এক আল্লাহ ব্যতীত। তিনি প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করেছেন। তাঁর বান্দাকে সাহায্য করেছেন এবং তিনি একাই সকল দলকে পরাজিত করেছেন। এরপর তিনি দোয়া করেন। এভাবে তিনবার বলেছেন।”[সহিহ মুসলিম (১২১৮)]

২. মারওয়া পাহাড়ের উপর দোয়া করা। দলিল হচ্ছে- পূর্বোক্ত হাদিস। তাতে রয়েছে- এরপর তিনি মারওয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। যখন তিনি বাতনে ওয়াদি পৌঁছেন তখন তীব্রভাবে দৌঁড় দেন। এভাবে মারওয়াতে পৌঁছান এবং সাফার উপরে যা যা করেছেন মারওয়ার উপরেও তা তা করেন।[সহিহ মুসলিম (১২১৮)]

৩. আল-মাশআর আল-হারামের সন্নিকটে দোয়া করা। পূর্বোল্লেখিত হাদিসে রয়েছে- “এরপর তিনি কাসওয়াতে (তাঁর উট) আরোহণ করে ‘আল-মাশআর আল-হারাম’ এ আসেন। তারপর কিবলামুখী হয়ে দোয়া করেন। তাকবীর উচ্চারণ করেন। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়েন ও আল্লাহর একত্ববাদ ঘোষণা করেন। আকাশ ভালভাবে ফর্সা হওয়া পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন।[সহিহ মুসলিম (১২১৮)]

৪. আরাফার দিন দোয়া করা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: সর্বোত্তম দোয়া হচ্ছে- আরাফার দিনের দোয়া।[তিরমিজি (৩৫৮৫) শাইখ আলবানী “সহিহুল জামে” গ্রন্থে হাদিসটিকে হাসান বলেছেন]

৫. ছোট পিলার ও মধ্যবর্তী পিলারে কংকর নিক্ষেপ করার পর দোয়া করা। ইমাম বুখারী তাঁর সহিহ গ্রন্থে সালেম বিন আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণনা করেন যে, আব্দুল্লাহ ইবনে উমর নিকটবর্তী পিলারে সাতটি কংকর নিক্ষেপ করতেন। প্রত্যেকটি নিক্ষেপের সাথে তাকবীর বলতেন। এরপর একটু সামনে এগিয়ে এসে নীচু জায়গায় কিবলামুখী হয়ে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাত তুলে দোয়া করতেন। এরপর পূর্বের মত মধ্যবর্তী পিলারেও কংকর নিক্ষেপ করতেন। তারপর উত্তর পার্শ্বের নীচু জায়গায় এসে কিবলামুখী হয়ে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাত উচু করে দোয়া করতেন। এরপর উপত্যকার একেবারে নীচে অবস্থিত ‘আকাবা পিলারে’ কংকর নিক্ষেপ করতেন। নিক্ষেপের পর আর দাঁড়াতেন না। তিনি বলতেন: আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এভাবেই আমল করতে দেখেছি।[সহিহ বুখারী (১৭৫২)]

আল্লাহই ভাল জানেন।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব

➥ লিংকটি কপি অথবা প্রিন্ট করে শেয়ার করুন:
পুরোটা দেখুন

Mahmud Ibn Shahid Ullah

"যে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়, সৎকর্ম করে এবং বলে, আমি একজন মুসলিম, তার কথা অপেক্ষা উত্তম কথা আর কার?" আমি একজন তালিবুল ইলম। আমি নিজেকে ভুলের উর্ধ্বে মনে করি না এবং আমিই হক্ব বাকি সবাই বাতিল এমনও ভাবিনা। অতএব, আমার দ্বারা ভুলত্রুটি হলে নাসীহা প্রদানের জন্যে অনুরোধ রইল। ❛❛যখন দেখবেন বাত্বিল আপনার উপর সন্তুষ্ট, তখন বুঝে নিবেন আপনি ক্রমের হক্ব থেকে বক্রপথে ধবিত হচ্ছেন।❞
এছাড়াও পড়ে দেখুন
Close
Back to top button