ফযিলতপূর্ণ রমযান মাসে পড়ার জন্য বিশেষ কোন যিকির বর্ণিত হয়নি
প্রশ্নঃ আমি খেয়াল করলাম আমাদের এলাকার ইমাম প্রত্যেক নামাযের শেষে: ‘আশহাদু আন লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’, ‘আসতাগফিরুল্লাহ্’, ‘নাসআলুকাল জান্নাহ’, ‘নাউযুবিকা মিনান্ নার’ তিনবার করে পড়েন।
এটি কী সুন্নাহসম্মত পদ্ধতি? আমরাও কি এভাবে পড়তে পারি? এছাড়াও আর কি কি দোয়া আছে? আমি সেগুলো জানতে চাই; যেন এখন থেকে আমি সেগুলো পড়তে পারি।
উত্তরঃ আলহামদুলিল্লাহ।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ্ তে রমযান সংক্রান্ত বিশেষ কোন যিকির-দোয়া উদ্ধৃত হয়নি। শুধু শেষ দশকে লাইলাতুল ক্বদর অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন: আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আপনার কি অভিমত, যদি আমি জানতে পারি কোন রাতটি লাইলাতুল ক্বদরের রাত তখন আমি কি (দোয়া) বলব?
তিনি বললেন: তুমি বলবে, ‘আল্লাহুম্মা! ইন্নাকা আফুউন, তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি’ (অর্থ, হে আল্লাহ্! আপনি ক্ষমাশীল। ক্ষমা করাটা পছন্দ করেন। সুতরাং আমাকে ক্ষমা করে দিন।)[হাদিসটি ইমাম তিরমিযি (৩৫১৩) বর্ণনা করেন এবং তিনি বলেন: হাদিসটি সহিহ ও হাসান]
এছাড়া শুধু রমযান মাস কেন্দ্রিক নির্দিষ্ট সংখ্যাবিশিষ্ট, নির্দিষ্ট সওয়াববিশিষ্ট বিশেষ কোন যিকির উদ্ধৃত হয়নি। বরং মুসলমানের জন্য মুস্তাহাব হচ্ছে, সর্বাবস্থায় আল্লাহ্কে স্মরণ করা, যেভাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যিকির ও দোয়ার মাঝে সমন্বয় করতেন; যাতে করে এ মাসটির দিবারাতকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগাতে পারেন।
বিশেষতঃ দোয়া কবুল হওয়ার সময়গুলোকে যেমন- শেষ রাত, জুমার দিন আসরের নামাযের পর ইত্যাদি। এ সময় আল্লাহ্র কাছে একনিষ্ঠ হয়ে জান্নাত চাইবে এবং জাহান্নাম থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করবে।
ইমাম শাতেবি (রহঃ) বলেন:
অতএব, বিদাত হচ্ছে- দ্বীনি বিষয়ে এমন একটি নব উদ্ভাবিত পন্থা যেটা শরয়ি পন্থার সাথে সাদৃশ্য রাখে, এ পথে চলার উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহ্র বন্দেগীর ক্ষেত্রে অতিরঞ্জন…। এর মধ্যে রয়েছে- নির্দিষ্ট কিছু ধরণ ও পদ্ধতি মেনে চলা। যেমন, সম্মিলিতভাবে একই সুরে যিকির করা।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মদিবসকে ঈদ হিসেবে গ্রহণ করা এবং এ ধরণের অন্য আরও যা কিছু রয়েছে। এছাড়াও বিশেষ কিছু সময়ে বিশেষ কিছু ইবাদত পালন করা; যে ইবাদতগুলোর জন্য এ সময় নির্ধারণ শরয়ি দলিল-প্রমাণে পাওয়া যায়নি।[আল-ইতিসাম (১/৩৭-৩৯) থেকে সমাপ্ত]
এ প্রসঙ্গে একটি বিষয়ে আমরা সাবধান করতে চাই। সেটা হচ্ছে, অনেক ব্লগ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পেইজে রমযানের প্রতিদিনের জন্য বিশেষ দোয়া ও যিকির প্রচার করা হয়। এগুলো মানুষের আবিষ্কৃত। কেউ হয়তো নিজস্ব পছন্দ হিসেবে এগুলো প্রচার করেছিলেন। কিন্তু, অনেক মানুষ এগুলোকে এ মোবারক মাস উপলক্ষে শরিয়ত প্রদত্ত ইবাদত বলে ধারণা করছে।
প্রকৃতপক্ষে এগুলো সুন্নাহ্ সাপেক্ষ নয়। ইবাদতের ক্ষেত্রে নবীর আদর্শ নয়।
তাই একজন মুসলমানের কর্তব্য হচ্ছে- সকাল-সন্ধ্যার দোয়াসমূহ, নামায শেষান্তের দোয়াসমূহ, বিভিন্ন শরয়ি উপলক্ষগুলো কেন্দ্রিক দোয়াসমূহ পড়তে সচেষ্ট থাকা। কুরআন তেলাওয়াত, অধ্যয়ন ও অর্থ হৃদয়াঙ্গম করতে নিবিষ্ট হওয়া। যে ব্যক্তি প্রতিদান খুঁজে বেড়ায় ও সওয়াব পেতে চায় সেটা পাওয়ার জন্য এ দোয়াগুলো যথেষ্ট।
আল্লাহ্ই ভাল জানেন।
সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব