কুরআন ও কুরআনের জ্ঞানসমূহ

প্রশ্ন : ‘আমরা সত্বর তোমার উপর নাযিল করব ভারী কিছু বিষয়’-আয়াতটির ব্যাখ্যা কি? অনেকে এ আয়াত দ্বারা ইক্বামতে দ্বীন বুঝাতে চান। এটা সঠিক কি?

উত্তর : উক্ত আয়াতে ‘ভারী কিছু বিষয়’-এর অর্থ পূর্ণ কুরআন ও ইসলাম (কুরতুবী)
ক্বাতাদাহ বলেন, ‘আল্লাহর কসম! ভারী হ’ল এর ফরয সমূহ এবং দন্ডবিধি সমূহ’।
মুজাহিদ বলেন, ‘এর হালাল ও হারাম সমূহ’। মুহাম্মাদ বিন কা‘ব আল-কুরাযী বলেন, ‘মুনাফিক ও কাফিরদের জন্য ভারী’ (কুরতুবী)

তবে ঈমানদারগণের জন্য ইসলামের বিধান পালন কখনোই ভারী নয়। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা কর ধৈর্য ও ছালাতের মাধ্যমে। আর তা অবশ্যই কঠিন কাজ, বিনীত বান্দাদের জন্য ব্যতীত’ (বাক্বারাহ ২/৪৫)

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘নিশ্চয়ই এ দ্বীন সহজ। যে ব্যক্তি এতে কঠোরতা আরোপ করবে, সে পরাভূত হবে। অতএব তোমরা সঠিক পথে থাক এবং মধ্যমপন্থা অবলম্বন কর ও মানুষকে সুসংবাদ প্রদান কর’ (বুখারী হা/৩৯; মিশকাত হা/১২৪৬)

এর দ্বারা বুঝা যায় যে, ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য ছালাত ও ইবাদতের মাধ্যমে মানুষের মন-মানসিকতাকে আগেই প্রস্ত্তত করে নিতে হয়। এগুলি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য ‘ট্রেনিং কোর্স’ নয়। যেমনটি আধুনিক কালের অনেক রাজনৈতিক
মুফাসসির ধারণা করে থাকেন (আবুল আ‘লা মওদূদী, খুত্ববাত (দিল্লী-৬ : মারকাযী মাকতাবা ইসলামী, ১৯৮৭ খৃ.) ৩২০ পৃ.)। বরং ইসলামী রাষ্ট্র থাক বা না থাক, ইসলামী ইবাদত সমূহ সর্বাবস্থায় ফরয। আর ‘ট্রেনিং কোর্স’ হয় একটি নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য।

অত্র আয়াত ইসলামের সূচনাকালে মক্কায় নাযিল হয়েছে। অতঃপর ধীরে ধীরে তেইশ বছরে গিয়ে মদীনায় ইসলাম পরিপূর্ণতা লাভ করেছে। এর মধ্যে শিক্ষণীয় বিষয় এই যে, বড় বোঝা বহন করার জন্য বড় হৃদয়ের দৃঢ়চিত্ত মানুষ আবশ্যক। আর সেজন্য সর্বাগ্রে নিশুতি রাতে একাগ্রচিত্তে আল্লাহর ইবাদতের মাধ্যমে তার প্রতি একান্তভাবে নির্ভরশীল হওয়া ও আধ্যাত্মিক চেতনা সম্পন্ন হওয়ার আদেশ দেওয়া হয়েছে। হাদীছে ছালাতকে শ্রেষ্ঠ ইবাদত এবং ইসলামের খুঁটি বলা হয়েছে (তিরমিযী হা/২৬১৬; মিশকাত হা/২৯; ছহীহাহ হা/১১২২)

সমাজের পুঞ্জিভূত কুসংস্কারের বিরুদ্ধে জিহাদ করা দুর্বলচিত্ত ও সুবিধাবাদী লোকদের মাধ্যমে কখনো সম্ভব নয়। বস্ত্ততঃ ইসলাম হ’ল আল্লাহ প্রেরিত ‘স্পষ্ট ও স্বচ্ছ দ্বীন’ (আহমাদ হা/১৫১৯৫; মিশকাত হা/১৭৭; ইরওয়া হা/১৫৮৯)

একে বাস্তবায়নের জন্য স্বচ্ছ হৃদয়ের মুমিন আবশ্যক। যে সাহসের সাথে সত্যকে সত্য ও মিথ্যাকে মিথ্যা বলতে পারে। নইলে সে ধ্বংস হবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘আমি তোমাদেরকে স্পষ্ট দ্বীনের উপর ছেড়ে যাচ্ছি। যার রাত্রি হ’ল দিনের মত। আমার পরে এ থেকে যে মুখ ফিরিয়ে নিবে, সে ধ্বংস হবে’ (ইবনু মাজাহ হা/৪৩; হাকেম হা/৩৩১; আহমাদ হা/১৭১৮২; ছহীহাহ/৯৩৭)। অতএব উক্ত আয়াত থেকে ইক্বামতে দ্বীন অর্থ গ্রহণ করা সঠিক হবে না।

সূত্র: মাসিক আত-তাহরীক।

➥ লিংকটি কপি অথবা প্রিন্ট করে শেয়ার করুন:
পুরোটা দেখুন

Mahmud Ibn Shahid Ullah

"যে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়, সৎকর্ম করে এবং বলে, আমি একজন মুসলিম, তার কথা অপেক্ষা উত্তম কথা আর কার?" আমি একজন তালিবুল ইলম। আমি নিজেকে ভুলের উর্ধ্বে মনে করি না এবং আমিই হক্ব বাকি সবাই বাতিল এমনও ভাবিনা। অতএব, আমার দ্বারা ভুলত্রুটি হলে নাসীহা প্রদানের জন্যে অনুরোধ রইল। ❛❛যখন দেখবেন বাত্বিল আপনার উপর সন্তুষ্ট, তখন বুঝে নিবেন আপনি ক্রমের হক্ব থেকে বক্রপথে ধবিত হচ্ছেন।❞
Back to top button