বিবাহ ও দাম্পত্য

প্রশ্ন: স্বামী-স্ত্রী একে অপরের প্রতি `কৃতজ্ঞতা পোষণ করা’ বলতে কী বুঝায় এবং কিভাবে তা করতে হয় অর্থাৎ কী কী করলে কৃতজ্ঞতাআদায় করা হয়?

উত্তর: কৃতজ্ঞতা আদায়ের আবশ্যকতা:*
আমাদের জানা আবশ্যক যে, স্বামী-স্ত্রী উভয়ের জন্য পরস্পরের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা ফরয। এটি স্ত্রীর উপর যেমন আবশ্যক তেমন স্বামীর উপরও আবশ্যক। প্রত্যেকেই অন্যের অবদানকে স্বীকার করবে এবং তার প্রতি শুকরিয়া জানাবে-এটা যেমন সুস্থ ও সুন্দর দাম্পত্য জীবনের দাবী তেমনি ইসলামের নির্দেশ। আল্লাহ তাআলা বলেন,

هَلْ جَزَاءُ الْإِحْسَانِ إِلَّا الْإِحْسَانُ
“সৎকাজের প্রতিদান উত্তম পুরস্কার ব্যতীত কি হতে পারে?” (সূরা আর রহমান: ৬০)
ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:

مَنْ آتَى إِلَيْكُمْ مَعْرُوفًا فَكَافِئُوهُ، فَإِنْ لَمْ تَجِدُوا فَادْعُوا لَهُ حَتَّى تَعْلَمُوا أَنْ قَدْ كَافَأْتُمُوهُ
“যে ব্যক্তি তোমাদের উপর ইহসান করে (দান-সদাচরণ) তার প্রতিদান দিয়ে দাও। অগত্যা যদি দিতে নাই পার তাহলে তার জন্য দু’আ কর যে পর্যন্ত না তোমরা মনে কর যে, তোমরা তার প্রতিদান দিতে পেরেছ।” (সুনানে নাসায়ী- অধ্যায়: যাকাত, পরিচ্ছেদ
যে ব্যক্তি মহান মহীয়ান আল্লাহ্‌র নামে কিছু চায়, হা/২৫৬৭)

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
مَنْ لاَ يَشْكُرِ النَّاسَ لاَ يَشْكُرِ اللَّهَ
“যে ব্যক্তি মানুষের শুকরিয়া করেনা সে আল্লাহরও শুকরিয়া করে না।” সহীহ, মিশকাত ৩০২৫, সহীহাহ ৪১৭, তা’লীকুর রাগীব ২/৫৬, তিরমিযী হাদিস নম্বর: ১৯৫৪ [আল মাদানি প্রকাশনী]

কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য যে, বর্তমানে অনেক দম্পতি একে অপরের প্রতি কৃতজ্ঞতা আদায়ের বিষয়ে মোটেই আন্তরিক নয়। যার কারণে তাদের মধ্যে মনোমালিন্য, অশান্তি ও কোলহ সর্বদা লেগেই থাকছে। তবে এটি কেবল এক পক্ষ থেকে থাকলে হবে না; থাকতে হবে উভয় পক্ষ থেকে। আল্লাহ সকলকে বুঝার তাওফিক দান করুন। আমীন।

*কৃতজ্ঞতা বলতে কী বুঝায়?*
কৃতজ্ঞতা বলতে বুঝায় কারো অবদান স্বীকার করা এবং তার ভালো কাজের প্রশংসা করা।

কৃতজ্ঞতা যেমন মুখের মাধ্যমে আদায় করা হয় তেমনি কাজের মাধ্যমেও তার প্রমাণ দিতে হয়।

*নিচে স্ত্রী ও স্বামী একে অপরের প্রতি কিভাবে কৃতজ্ঞতা আদায় করবে তা তুলে ধরা হল:*

*স্ত্রীর পক্ষ থেকে স্বামীর প্রতি কৃতজ্ঞতা:*
স্ত্রীর পক্ষ থেকে স্বামীর প্রতি কৃতজ্ঞতা বিভিন্নভাবে হতে পারে। যেমন,
– অন্তরে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা পোষণ করা এবং মুখে তা প্রকাশ করা যেমন বলা, ধন্যবাদ, থ্যাংক ইউ, শুকরিয়া ইত্যাদি যে সব শব্দ সমাজে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ শব্দ হিসেবে প্রচলিত রয়েছে।

– তার জন্য দুআ করা, যেমন বলা, জাযাকাল্লাহ খাইরান অর্থাৎ আল্লাহ তোমাকে উত্তম বিনিময় দান করুন…।

– যথাসম্ভব তার সেবা-যত্ন করা।

– তার আরাম-আয়েশ, ঘুম, খাওয়া-দাওয়া এবং ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের প্রতি লক্ষ রাখা।

– তার অর্থনৈতিক সক্ষমতার ব্যাপারে সজাগ থাকা এবং তার জন্য কষ্টকর হয় এমন কোন আবদার না করা।

– তার জৈবিক চাহিদা পূরণের ব্যাপারে সচেতন থাকা।

– তার হক আদায় করা।

– তার আনুগত্য করা (যদি তা হারাম ও সাধ্যাতিরিক্ত না হয়)।

– তাকে ভালবাসা ও সম্মান করা।

– তার প্রশংসা করা।

– তার সাথে সম্মানজনক কথা বলা।

– তার সাথে সুন্দর আচরণ ও নম্র ব্যবহার করা।

– তার অবদান স্বীকার করা।

– তার তার অনুপস্থিতে তার সন্তান-সন্ততি ও অর্থ সম্পদ সংরক্ষণ করা।

– তার অনুপস্থিতে নিজের ইজ্জত ও সম্ভ্রম হেফাজত করা।

– তার গোপনীয়তা প্রকাশ না করা।

– স্বামী ভুল করলে সুন্দর ভাষায় তা সংশোধন করা।

– স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার দাম্পত্য সংক্রান্ত বিষয় কারও সামনে প্রকাশ না করা। (এটি ইসলামের দৃষ্টিতে অত্যন্ত ঘৃণিত ও হারাম কাজ)

– তার মান-সম্মান নষ্ট হয় এমন কোন কাজ না করা এবং তার সম্মান বৃদ্ধির চেষ্টা করা ইত্যাদি।

এগুলো সবই তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের অন্তর্ভুক্ত।

*স্বামীর পক্ষ থেকে স্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা:*
উপরোল্লিখিত স্বামীর প্রতি স্ত্রীর যে সব কতর্ব্য সেগুলো প্রায় সবই স্ত্রীর প্রতি স্বামীরও কতর্ব্য সামান্য কিছু পার্থক্য ছাড়া। নিচে সেগুলো দেখুন:

– অন্তরে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা পোষণ করা এবং মুখে তা প্রকাশ করা যেমন বলা, ধন্যবাদ, থ্যাংক ইউ, শুকরিয়া ইত্যাদি যে সব শব্দ সমাজে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ শব্দ হিসেবে প্রচলিত রয়েছে।

– তার জন্য দুআ করা, যেমন বলা, জাযাকিল্লাহু খাইরান অর্থাৎ আল্লাহ তোমাকে উত্তম বিনিময় দান করুন..।

– তার স্বাস্থ্যের ব্যাপারে যত্ন নেয়া এবং তার আরাম, ঘুম, শারীরিক সক্ষমতা, খাওয়া-দাওয়া ও পছন্দ-অপছন্দের প্রতি লক্ষ রাখা।

– ঋতুস্রাব, গর্ভ ধারণ, সন্তান ভূমিষ্ট এবং মেয়েলী বিভিন্ন সমস্যার প্রতি বিশেষ যত্ন নেয়া।

– যথাসম্ভব তার বৈধ ইচ্ছা পূরণ করা (যদি সামর্থ্যের মধ্যে থাকে)।

– তার জৈবিক চাহিদা পূরণের ব্যাপারে সচেতন থাকা।

– তার হক আদায় করা।

– তাকে ভালবাসা,

– তাকে সম্মান করা ও তার প্রশংসা করা।

– তার সাথে সম্মানজনক কথা বলা।

– তার সাথে সুন্দর আচরণ ও নম্র ব্যবহার করা।

– তার অবদান স্বীকার করা।

– পারিবারিক বিভিন্ন বিষয়ে স্ত্রীর সাথে পরামর্শ করা।

– তার মান-সম্মান ও সম্ভ্রম রক্ষার ব্যবস্থা করা।

– তার গোপনীয়তা প্রকাশ না করা।

– স্ত্রী ভুল করলে সুন্দর ভাষায় তা সংশোধন করা।

– তাকে দ্বীন শিক্ষা ও পালনে সাহায্য করা

– তার সাথে হাসি-মজাক ও কৌতুক করা (এটি সুন্দর চরিত্রের বর্হিপ্রকাশ)।

– স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার দাম্পত্য সংক্রান্ত বিষয় কারও সামনে আলোচনা না করা।

– তার মান-সম্মান নষ্ট হয় এমন কোন কাজ না করা।

– তার পরিবারের সাথে সময়-সুযোগ বুঝে দেখা-সাক্ষাৎ ও যোগাযোগের সুযোগ দেয়া ইত্যাদি।

মোটকতা, হালাল পন্থায় একে অপরের খুশি রাখার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করবে তাহলে ইনশাআল্লাহ পারষ্পারিক ভালবাসা, সুখ ও অবারিত কল্যাণ দ্বারা পূর্ণতায় ভরে যাবে দাম্পত্য জীবন তারা উভয়ে পরকালে হাত ধরে প্রবেশ করবে চির সুখের নীড় জান্নাতে।

আল্লাহ তাআলা সকলকে তাওফিক দান করুন। আমীন।

 

——উত্তর প্রদানে:———-
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব

➥ লিংকটি কপি অথবা প্রিন্ট করে শেয়ার করুন:
পুরোটা দেখুন

মাহবুব বিন আনোয়ার

❝ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া কোন হক ইলাহ নেই,এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বান্দা ও রাসূল।❞ আমি যদিও একজন জেনারেল পড়ুয়া ছাত্র তাই আমার পক্ষে ভুল হওয়া অসম্ভব কিছু না, আমি ইসলামী শরীইয়াহ বিষয়ক জ্ঞান অর্জনের চেষ্টা করছি এবং এর সাথে মানুষ কে রাসুল (সা:) এর হাদিস এবং আমাদের সালফে সালেহীনদের আদর্শের দিকে দাওয়াত দেওয়ার চেষ্টা করি। যদি আমার কোন ভুল হয় ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন এবং সেটা আমাকে জানাবেন যাতে আমি শুধরে নিতে পারি।
এছাড়াও পড়ে দেখুন
Close
Back to top button