প্রশ্ন : স্ত্রীর সাথে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে আমি তাকে কুড়াল দিয়ে মারতে যাই। সে হাত দ্বারা প্রতিহত করে এবং ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে কুড়ালটি এসে আমার মাথায় আঘাত করে। এতে আমি রাগান্বিত হয়ে তাকে তিন তালাক দেই। রাগ প্রশমিত না হওয়ায় তাকে আরো এক তালাক দেই। পরে লোকজন এসে আমাদের দু’জনকে দু’দিকে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে রাগ কমলে আমি অত্যন্ত অনুতপ্ত হই এবং আমি আমার স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিতে চাই। এক্ষণে আমি আমার স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিতে চাইলে করণীয় কি?
কাজেই কেউ তার স্ত্রীকে এক বৈঠকে তিন তালাক দিলে সে স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিতে পারে। ইদ্দতের (তিন তুহরের) মধ্যে হ’লে স্বামী সরাসরি স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিবে। আর ইদ্দত পার হয়ে গেলে উভয়ের সম্মতিতে নতুন বিবাহের মাধ্যমে ফেরত নিবে (বাক্বারাহ ২/২৩২)।
ছাহাবী আবু রুকানা তার স্ত্রীকে তালাক
দিয়েছিলেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তুমি তোমার স্ত্রীকে ফেরত নাও। তিনি
বললেন, আমি তাকে এক মজলিসে তিন তালাক দিয়েছি। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, আমি অবশ্যই এ খবর জানি। তুমি তাকে ফেরত নাও (আবূদাঊদ হা/২১৯৬, সনদ হাসান)।
অতএব প্রশ্নে উল্লেখিত অবস্থায় স্বামী তার স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিতে পারবেন।
উল্লেখ্য যে, ‘তাহলীল’ বা হিল্লা একটি জাহেলী প্রথা। এর সাথে ইসলামী শরী‘আতের কোন
সম্পর্ক নেই। আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) হিল্লাকারী ও যার জন্য হিল্লা করা হয় উভয়কে লা‘নত করেছেন (নাসাঈ, তিরমিযী, দারেমী, মিশকাত হা/৩২৯৬-৯৭)।
এক সাথে তিন তালাককে তালাকে বায়েন গণ্য করার মন্দ প্রতিক্রিয়ায় মাযহাবের নামে ‘হিল্লা’ প্রথা চালু হয়েছে। অথচ এক সঙ্গে তিন তালাক বায়েন বিষয়টি পবিত্র কুরআন (বাক্বারাহ ২/২২৮-২৯; তালাক ৬৫/১) ও ছহীহ হাদীছ সমূহের প্রকাশ্য বিরোধী (মুসলিম হা/১৪৭২; আবুদাঊদ হা/২১৯৬; আহমাদ হা/২৩৮৭)।
সবচেয়ে বড় কথা হ’ল, এতে স্বামী-স্ত্রী তাদের আকস্মিক সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দেওয়া সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। অতএব ধর্মের নামে প্রচলিত এই নোংরা প্রথা থেকে প্রত্যেক মুমিন নর-নারীকে বেঁচে থাকা আবশ্যক (বিস্তারিত দ্রঃ মুহাম্মাদ আসাদু্ল্লাহ আল-গালিব প্রণীত ‘তালাক ও তাহলীল’ বই)।
সূত্র: মাসিক আত-তাহরীক।