বিবাহ ও দাম্পত্য

শায়খ মুহাম্মদ ইব্ ন সালেহ আল-উসাইমিন এর দৃষ্টিতে শরীয়াতে হিল্লা বিয়ের বিধান

প্রশ্ন : আপনাদের দৃষ্টিতে শরীয়াতে হিল্লা বিয়ের বিধান কী ?

উত্তর : আলহামদুলিল্লাহ্‌।

প্রথমে জানা প্রয়োজন যে, হিল্লা বিয়ে কি। কোন ব্যক্তির এমন নারীকে বিয়ে করার ইচ্ছা করা, যাকে তার স্বামী তিন তালাক দিয়েছে, অর্থাৎ তার স্বামী তাকে তালাক দিয়ে অতঃপর ফিরিয়ে নিয়েছে, আবার তালাক দিয়ে অতঃপর ফিরিয়ে নিয়েছে, পুনরায় তৃতীয়বার তাকে তালাক দিয়েছে। স্বামীর তিন তালাক প্রাপ্তা এ নারী পুনরায় তার স্বামীর জন্য বৈধ হবে না, যতক্ষণ না তাকে দ্বিতীয় স্বামী আগ্রহসহ বিয়ে করে তার সাথে সহবাসে লিপ্ত হয়, অতঃপর সে ঐ স্বামী থেকে পৃথক হয় তার মৃত্যুর কারণে, অথবা তালাকের কারণে, অথবা বিয়ে ভেঙে দেয়ার কারণে, তাহলে সে প্রথম স্বামীর জন্য বৈধ হবে।

আল্লাহ তাআলা বলেন :

-(الطَّلاقُ مَرَّتَانِ فَإِمْسَاكٌ بِمَعْرُوفٍ أَوْ تَسْرِيحٌ بِإِحْسَانٍ )-(البقرة: من الآية229) إلى قول الله تعالى : -(فَإِنْ طَلَّقَهَا)-(البقرة: من الآية230) أي الثالثة -(َإِنْ طَلَّقَهَا فَلا تَحِلُّ لَهُ مِنْ بَعْدُ حَتَّى تَنْكِحَ زَوْجاً غَيْرَهُ فَإِنْ طَلَّقَهَا فَلا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا أَنْ يَتَرَاجَعَا إِنْ ظَنَّا أَنْ يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ )-(البقرة: من الآية230)

কোন ব্যক্তি যদি এ ধরনের নারীকে বিয়ে করে, অর্থাৎ যাকে তার স্বামী তিন তালাক দিয়েছে, এ নিয়তে যে, যখন নারীটি প্রথম স্বামীর জন্য হালাল হবে, অর্থাৎ যখন সে তার সাথে সহবাস করবে, সে তাকে তালাক দিয়ে দেবে, অতঃপর নারীটি ইদ্দত পালন করে তার পূর্বের স্বামীর কাছে ফিরে যাবে। এ বিয়ে সংঘটিত হয় না, এ বিয়ে অবৈধ ও অভিশপ্ত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এ বিয়েতে হিল্লাকারী ও যার জন্য হিল্লা করা হয় উভয়কেই অভিসম্পাত করেছেন। তিনি হিল্লাকারীকে ভাড়া করা পাঠা আখ্যা দিয়েছেন। কারণ সে ভাড়া করা পাঠার ন্যায়, যেমন বকরির মালিক নির্দিষ্ট সময়ের জন্য পাঠা ভাড়া করে অতঃপর তার মালিককে ফের দেয়। এ ব্যক্তি পাঠার ন্যায়, তার কাছে তালাক প্রাপ্তা নারীকে বিয়ে করা, অতঃপর তাকে পৃথক করে দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ হিল্লা বিয়ে দু’ভাবে হয় :

এক. কাউকে বলা হল, আমাদের মেয়েকে তোমার কাছে বিয়ে দিচ্ছি এ শর্তে যে, তার সাথে সহবাস হলে তাকে তুমি তালাক দিয়ে দেবে।

দুই. কোন শর্ত ছাড়া শুধু অন্তরে নিয়ত গোপন করে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হল। এ নিয়ত স্বামীর মধ্যে আবার কখনো স্ত্রী ও তার অভিভাবকের মধ্যেও থাকতে পারে। যদি স্বামীর মধ্যে এ নিয়ত থাকে, মূলত পৃথক করার অধিকার সেই সংরক্ষণ করে, তাহলে এ আকদের মাধ্যমে তার জন্য স্ত্রী হালাল হবে না, কারণ এ বিয়ের মধ্যে বিয়ের মূল উদ্দেশ্যই তার ছিল না, অর্থাৎ মহব্বত, ভালবাসা এবং নিজেকে পবিত্র রাখা ও সন্তান লাভের আশা ইত্যাদিসহ আজীবন স্ত্রীর সাথে ঘর-সংসার করার বিয়ের যে মূল উদ্দেশ্য, তাই তার মধ্যে বিদ্যমান ছিল না, অতএব এ বিয়ে বিশুদ্ধ হবে না। আর নারী বা তার অভিভাবকের হিল্লার নিয়তের ব্যাপারে আলেমদের মত বিরোধ রয়েছে, এখন পর্যন্ত আমার কাছে বিশুদ্ধ মন্তব্য কোনটি স্পষ্ট নয়।

মুদ্দাকথা : হিল্লা বিয়ে হারাম, এ বিয়ের ফলে নারী তার প্রথম স্বামীর জন্য হালাল হবে না, কারণ এ বিয়েই শুদ্ধ নয়”। শায়খ উসাইমীন -রাহিমাহুল্লাহ – ‘ফতোয়া নুরুন আলাদ্দারব’, পৃষ্ঠা : (৫৭)

আল্লাহ্‌ সবচেয়ে ভালো জানেন।

সংকলন : সানাউল্লাহ নজির আহমদ।
সূত্র : ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদি আরব।

➥ লিংকটি কপি অথবা প্রিন্ট করে শেয়ার করুন:
পুরোটা দেখুন

মোঃ মামুনূর রশিদ (বকুল)

❝ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া কোন হক ইলাহ নেই,এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বান্দা ও রাসূল।❞ যে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়, সৎকর্ম করে এবং বলে, আমি একজন মুসলিম, তার কথা অপেক্ষা উত্তম কথা আর কার?" আমি একজন তালিবুল ইলম। আমি নিজেকে ভুলের উর্ধ্বে মনে করি না এবং আমিই হক্ব বাকি সবাই বাতিল এমনও ভাবিনা। অতএব, আমার দ্বারা ভুলত্রুটি হলে নাসীহা প্রদানের জন্যে অনুরোধ রইল।
এছাড়াও পড়ে দেখুন
Close
Back to top button