বিবাহ ও দাম্পত্য

জনৈক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে তালাক দিয়েছে, এখন সে তাকে ফিরে পেতে চায়, তালাকের বৈধ পদ্ধতি কি?

প্রশ্ন : শরীয়াতের বিধান মোতাবিক হিল্লার পদ্ধতি কী ? জায়েদ তার সাবেক স্ত্রী সাফিয়াকে তালাক দিয়েছে, অতঃপর সে পুনরায় তাকে হালাল করে নিতে চায়, ফলে দ্রুত বীর্যপাতের রোগী আমর তাকে বিয়ে করে, সে সহবাসে সক্ষম কিন্তু তার রোগের কারণে এ কাজে সে দুর্বল, আমর সাফিয়াকে বিয়ে করে তার সাথে কয়েক দিন ঘর-সংসার করে তাকে তালাক দিয়েছে, এখন সাফিয়া তার পূর্বের স্বামী জায়েদকে বিয়ে করতে চায়, এটা কি বৈধ ? আশা করি বিষয়টি স্পষ্ট করবেন, এবং শরয়ীভাবে তালাক দেয়ার পদ্ধতি কি, জায়েদ তার স্ত্রীকে তালাক দিতে চাইলে তার কি করা উচিত ?

উত্তর : আলহামদুলিল্লাহ্‌।

প্রথমত : পুরুষ যদি কোন নারীকে হিল্লার শর্তে বিয়ে করে অথবা তার নিয়ত করে অথবা উভয় হিল্লাহর উপর একমত হয়, তাহলে বিয়ে বা আকদ বাতিল, আর বিয়ে অশুদ্ধ ও অবৈধ। ইমাম আহমদ ও ইমাম তিরমিজি রহ. আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু থেকে বর্ণনা করেন :

أن النبي صلى الله عليه وسلم لعن المحلل والمحلل له.

হিল্লাকারী ও যার জন্য হিল্লা করা হয় উভয়ের উপর নবী (ﷺ) লানত করেছেন। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে ইমাম আহমদ : (৩২৩২), ইব্ ন আবি শায়বাহ : (৪/২৯৬), বাযযার : (কাশফুল আসতার) (২/১৬৭), হাদিস নং : (১৪৪২), ইব্নুল জারুদ : (গাউসুল মাকদুদ) : (৩/২৫), হাদিস নং : (৬৮৪), বায়হাকি : (৭/২০৮), আরো দেখুন : ইলালুল হাদিস লি ইব্ ন আবি হাতেম : (১/৪১৩), হাদিস নং : (১২২৭)। ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, আমি মুহাম্মদ ইব্ ন ইসামাঈলকে এ হাদিস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছি, তিনি বলেন এ হাদিসটি হাসান। ইমাম আহমদ ও ইমাম তিরমিজি এ সম্পর্কে ইব্ ন মাসউদ থেকেও হাদিস বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন :

لعن رسول الله صلى الله عليه وسلم المحلل والمحلل له

“হিল্লাকারী ও যার জন্য হিল্লা করা হয় উভয়ের উপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) লানত করেছেন”। সুনানে তিরমিযি : অধ্যায় আন-নিকাহ, হাদিস নং : (১১১৯), সুনানে আবু দাউদ : অধ্যায় আন-নিকাহ, হাদিস নং : (২০৭৬), সুনানে ইব্ ন মাজাহ : অধ্যায় আন-নিকাহ, হাদিস নং : (১৯৩৫), মুসনাদে ইমাম আহমদ ইব্ ন হাম্বল : (১/৮৭)। ইমাম তিরমিজি হাদিসটি হাসান ও সহিহ বলেছেন।

দ্বিতীয়ত : নারীর তালাক ও ইদ্দত শেষ হওয়ার পর কোন পুরুষ যদি তাকে আগ্রহসহ বিয়ে করে, হিল্লার শর্ত বা নিয়ত ব্যতীত, অতঃপর দ্বিতীয় স্বামী তার সাথে সহবাসে মিলিত হয়, এবং পরবর্তীতে দ্বিতীয় স্বামী তাকে তালাক দেয়, তাহলে প্রথম স্বামী তাকে পুনরায় বিয়ে করতে পারবে। আয়েশা (রাঃ) বলেন :

سئل رسول الله صلى الله عليه وسلم عن رجل طلق امرأته (يعني ثلاثا) فتزوجت زوجا غيره فدخل بها، ثم طلقها قبل أن يواقعها أتحل لزوجها الأول؟ قالت: قال النبي صلى الله عليه وسلم: “لا تحل للأول حتى تذوق عسيلة الآخر ويذوق عسيلتها رواه الشيخان وأصحاب السنن، واللفظ لأبي داود .

রাসূলুল্লাহ (ﷺ)কে এক ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, যে তার স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়েছে, ফলে সে অন্য পুরুষকে বিয়ে করে তার সাথে নির্জনবাস করে, অতঃপর সহবাস ব্যতীতই স্বামী তাকে তালাক দেয়, সে কি পূর্বের স্বামীর জন্য হালাল হবে ? নবী (ﷺ) বললেন : “প্রথম স্বামীর জন্য হালাল হবে না, যতক্ষণ না সে অপরের সহবাসের স্বাদ গ্রহণ করে এবং সে তার সহবাসের স্বাদ গ্রহণ করে”।

সহিহ বুখারি, অধ্যায় আশ-শাহাদাত : (২৪৯৬), সহিহ মুসলিম, অধ্যায় আন-নিকাহ : (১৪৩৩), সুনানে তিরমিজি, অধ্যায় আন-নিকাহ : (১১১৮), সুনানে নাসায়ি, অধ্যায় আত-তালাক : (৩৪০৭), সুনানে আবু দাউদ, অধ্যায় আত-তালাক : (২৩০৯), সুনানে ইব্ ন মাজাহ, অধ্যায় আন-নিকাহ : (১৯৩২), মুসনাদে আহমদ ইব্ ন হাম্বল : (৬/২২৬), মুয়াত্তা ইমাম মালেক, অধ্যায় আন-নিকাহ :(১১২৭), সুনানে দারামি, অধ্যায় আত-তালাক : (২২৬৭)।

আল্লাহ্‌ সবচেয়ে ভালো জানেন।

সংকলন : সানাউল্লাহ নজির আহমদ।
সূত্র : ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদি আরব।

➥ লিংকটি কপি অথবা প্রিন্ট করে শেয়ার করুন:
পুরোটা দেখুন

মোঃ মামুনূর রশিদ (বকুল)

❝ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া কোন হক ইলাহ নেই,এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বান্দা ও রাসূল।❞ যে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়, সৎকর্ম করে এবং বলে, আমি একজন মুসলিম, তার কথা অপেক্ষা উত্তম কথা আর কার?" আমি একজন তালিবুল ইলম। আমি নিজেকে ভুলের উর্ধ্বে মনে করি না এবং আমিই হক্ব বাকি সবাই বাতিল এমনও ভাবিনা। অতএব, আমার দ্বারা ভুলত্রুটি হলে নাসীহা প্রদানের জন্যে অনুরোধ রইল।
এছাড়াও পড়ে দেখুন
Close
Back to top button