প্রশ্ন: জান্নাতের রক্ষকের নাম কি রেদওয়ান? আমি শাইখ বিন উছাইমীন (রহঃ) এর ফতোয়াতে শুনেছি যে, তিনি বলেন: “জান্নাতের রক্ষকের নাম ‘রেদওয়ান’ মর্মে কিছু আছার (সাহাবী বা তাবেয়ীর উক্তি) প্রসিদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু, এই মর্মে আমি কোন সহিহ হাদিস জানি না”। তাঁর কথা থেকে কি এই নামটি সাব্যস্ত করা বুঝা যায়?
উত্তরের সংক্ষিপ্তসার: সংক্ষিপ্তসার: এ নামটি সহিহ হাদিসসমূহে সাব্যস্ত হয়নি। কিন্তু, আলেমগণ এ নামটি ব্যবহার করে আসছেন এবং এ নামের উল্লেখ করাকে তারা দোষের কিছু মনে করেন না। সুতরাং এ বিষয়টি (ইনশাআল্লাহ্) সহজ।
উত্তর:
আলহামদুলিল্লাহ।
আলেমদের মাঝে মশহুর যে, জান্নাতের রক্ষক ফেরেশতার নাম ‘রেদওয়ান’। কিন্তু, এ নামটি কুরআনে আসেনি, কিংবা সহিহ সুন্নাতেও আসেনি। বরং কিছু দুর্বল আছার (সাহাবী বা তাবেয়ীর উক্তি)-তে উদ্ধৃত হয়েছে।
ইবনুল কাইয়্যেম (রহঃ) বলেন: আল্লাহ্ তাআলা জান্নাতের সর্বোচ্চ মর্যাদাবান রক্ষকের নাম রেখেছেন: رضوان (রেদওয়ান)। এ নামটি الرضا (সন্তুষ্টি) শব্দ থেকে উদ্ভূত। আর জাহান্নামের রক্ষকের নাম রেখেছেন: مالك (মালিক)। এ নামটি الملك (আল-মুলক) শব্দ থেকে উদ্ভূত। যা শক্তি ও কঠোরতা বুঝায়।[হাদিল আরওয়াহ (১/৭৬)]
মুনাওয়ি বলেন: “জান্নাত রক্ষা করার দায়িত্বপ্রাপ্তকে বলেছেন খাযেন (ভাণ্ডার-রক্ষক)। কেননা জান্নাত হচ্ছে- আল্লাহ্র ভাণ্ডার; যা তিনি তাঁর বান্দাদের জন্য প্রস্তুত করেছেন…। আপাত অর্থে জান্নাতের রক্ষক শুধু একজন। কিন্তু, আসলে সেটা উদ্দেশ্য নয়। দলিল হচ্ছে আবু হুরায়রা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদিস: “যে ব্যক্তি কোন জিনিসের এক জোড়া আল্লাহ্র রাস্তায় ব্যয় করবে জান্নাতের প্রত্যেক দরজার রক্ষকরা তাকে ডাকবে: আস”। এবং জান্নাতের রক্ষক একাধিক হওয়া মর্মে সুস্পষ্ট ভাষায় বর্ণিত অন্যান্য হাদিস। তবে, রেদওয়ান হচ্ছেন- তাদের মাঝে সর্বাধিক মর্যাদাবান ও নেতা। আর সর্বাধিক মর্যাদাবান রাসূলকে অভ্যর্থনা জানাবে সর্বাধিক মর্যাদাবান রক্ষক।”[ফায়যুল কাদির (১/৫০) থেকে সমাপ্ত]
হাফেয ইবনে কাছির (রহঃ) ফেরেশতাদের সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন:
“তাদের মধ্যে রয়েছেন জান্নাতের দায়িত্বে রত, জান্নাতীদের অভ্যর্থনার প্রস্তুতিতে রত এবং জান্নাতের বসবাসকারীদের মেহমানদারির পরিবেশ তৈরীতে রত; যেমন জান্নাতীদের পোশাক, অলংকার, বাসস্থান, খাবারদাবার ও পানীয় ইত্যাদি যা কোন চক্ষু দেখেনি, কোন কান শুনেনি এবং কোন মানুষের কল্পনায়ও আসেনি। জান্নাতের রক্ষক হচ্ছেন একজন ফেরেশতা। যার নাম হচ্ছে- রেদওয়ান। কোন কোন হাদিসে তার নাম সুস্পষ্টভাবে উল্লেখিত হয়েছে।”[আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া (১/৫৩) থেকে সমাপ্ত]
সহিহ হাদিসসমূহে সাব্যস্ত হয়েছে যে, তার উপাধি হচ্ছে- খাযেন (রক্ষক); নাম নয়। শাফায়াতের হাদিসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সাব্যস্ত হয়েছে যে, তিনি বলেন: “কিয়ামতের দিন আমি জান্নাতের দরজায় আসব এবং দরজা খুলতে বলব। তখন রক্ষক বলবেন: আপনি কে? আমি বলব: মুহাম্মদ। তিনি বলবেন: আপনার জন্য খোলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আপনার আগে আর কারো জন্য খুলব না।”[সহিহ মুসলিম (১৯৭)]
কিন্তু, এ নামটি কিছু দুর্বল হাদিসে বর্ণিত হওয়ায় এবং আলেমদের মাঝে এর ব্যবহার প্রসিদ্ধি লাভ করায় এটি ব্যবহার করার প্রশস্ততা রয়েছে, ইনশাআল্লাহ্।
স্থায়ী কমিটির ফতোয়াসমগ্রে এসেছে (২৮/৩৫৩):
রেদওয়ান কি জান্নাতের রক্ষক? তার নামটি কোথায় উদ্ধৃত হয়েছে?
উত্তর হল: আলেমদের নিকট মশহুর হচ্ছে, জান্নাতের রক্ষকের নাম রেদওয়ান। কিছু কিছু হাদিসে তার নাম উদ্ধৃত হলেও এ নাম নিয়ে আপত্তি আছে। আল্লাহ্ই সর্বজ্ঞ।[সমাপ্ত]
শাইখ উছাইমীন বলেন:
“পক্ষান্তরে, রেদোয়ান হচ্ছে জান্নাতের দায়িত্বপ্রাপ্ত। তার এ নামটি সুস্পষ্টভাবে সাব্যস্ত নয়; যেভাবে ‘মালিক’ (বুঝাতে চাচ্ছেন: জাহান্নামের রক্ষক) নামটি সাব্যস্ত হয়েছে। কিন্তু, আলেমদের নিকট তিনি এ নামে মশহুর।[শাইখ উছাইমীনের ফতোয়াসমগ্র (৩/১১৯) হতে সমাপ্ত]
সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব