আক্বীদাহ

প্রশ্ন : জনৈক আলেমের মতে, কেবল পীর ছাহেবেরা আল্লাহ ও নবীগণের নূর লাভ করে থাকে। আদম (আঃ)-এর নূর ছিল সাদা ও মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর নূর সবুজ। সেজন্য দেখা যায়, তারা মসজিদ বা কবরের উপর গম্বুজ নির্মাণ করে তাতে সবুজ রঙ করে ও মাথায় সবুজ পাগড়ী পরিধান করে। এমনকি মসজিদে নববীতে রাসূলের কবরের উপরও অনুরূপ সবুজ গম্বুজ নির্মাণ করা হয়েছে। উক্ত আক্বীদার শেষ পরিণতি জানতে চাই।

উত্তর : উক্ত আক্বীদা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত। নবী করীম (ছাঃ) বা ছাহাবীগণ থেকে এ বিষয়ে কোন বর্ণনা আসেনি। অতএব এই ধরনের আক্বীদা পোষণ করা বিদ‘আত। আর কবরের উপর কোন ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করা হারাম (মুসলিম হা/৯৭০; হাকেম হা/১৩৩০; মিশকাত হা/১৬৭০)। এই বিদ‘আতের সূচনা হয়েছে হিজরী ৭ম শতাব্দীতে ছূফীবাদী তুর্কী শাসকদের মাধ্যমে।

তুর্কীরাই রাসূল (ছাঃ)-এর কবরের উপর সবুজ গম্বুজ স্থাপন করেছিল। ইতিপূর্বে এর কোন
অস্তিত্ব ছিল না। হিজরী ৬৭৮ মোতাবেক ১২৭৯ খ্রিষ্টাব্দে সর্বপ্রথম গম্বুজটি নির্মাণ করেন মামলূক সুলতান কালাউন। অতঃপর হিজরী ৮৮৬ মোতাবেক ১৪৮১ খ্রিষ্টাব্দে অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত হবার পর সুলতান আশরাফ কায়েতবায়ী ৮৮৭ হিজরীতে পুনরায় পিলার দিয়ে একটি কালো পাথরের গম্বুজ নির্মাণ করেন।

পরবর্তী শাসকদের আমলে তাতে সাদা এবং নীল রঙের প্রলেপ দেয়া হয়েছিল। ৯৪৬ হিজরীতে গম্বুজের উপর তুর্কী খেলাফতের প্রতীকবাহী চন্দ্রাকৃতি স্থাপন করেন মক্কার শাসক ওয়াছেল। অতঃপর হিজরী ১২৩৩ সালে ওছমানীয় সুলতান আব্দুল হামীদ-২ নতুনভাবে গম্বুজটি নির্মাণ করেন। তিনি ইবনু ‘আরাবী (৫৫৮-৬৩৮ হিঃ)-এর
ভ্রান্ত ছূফীবাদী আক্বীদাকে বাস্তবায়ন করার জন্য ১২৫৩ হিজরীতে গম্বুজের উপর সবুজ রঙের প্রলেপ দেন। তখন থেকে এটি ‘কুববাতুল খাযরা’ (সবুজ গম্বুজ) নামে পরিচিতি লাভ করে এবং তা আজও রয়েছে।

১৮০৫ খৃষ্টাব্দে মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাবের অনুসারী সংস্কারবাদীগণ মদীনার বাক্বী‘ কবরস্থানের সকল কবরের উপর থেকে গম্বুজ ভেঙ্গে ফেলে দেন। কিন্তু বৃহত্তর ফিৎনার আশংকায় এবং গম্বুজটির বিশ্বব্যাপী পরিচিতির কারণে এটি ভাঙ্গেননি (রশীদ রেযা, আল-ওয়াহহাবিইয়ূন ওয়াল হিজায ৬৯-৭১ পৃঃ; আলী হাফেয, ফুছূল মিন তারীখিল মাদীনাতিল মুনাওয়ারাহ ১২৭-২৮ পৃঃ)। এর বিরুদ্ধে সঊদী ওলামায়ে কেরাম সোচ্চার হওয়া সত্ত্বেও কেবল ফিৎনার আশংকায় সরকার এটা রেখে দিয়েছেন (মাজমূ‘ ফাতাওয়া বিন বায ১/২৭০)

রাসূল (ছাঃ) সবুজ নয় বরং কালো পাগড়ী পরিধান করতেন। আমর বিন হুরায়েছ (রাঃ) বলেন,
নবী করীম (ছাঃ) জুম‘আর খুৎবা দিলেন, তখন তাঁর উপর কালো পাগড়ী ছিল। যার দু’মাথা কাঁধের মাঝে ঝুলছিল (মুসলিম, মিশকাত হা/১৪১০)

জাবের (রাঃ) বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বিনা ইহরামে যখন কা‘বা গৃহে ঢুকলেন, তখন তাঁর মাথায় কালো পাগড়ী ছিল (ইবনু মাজাহ হা/২৮২২)

তাছাড়া রাসূল (ছাঃ) সাদা পোষাক পরিধান করতে উৎসাহিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘তোমরা সাদা পোষাক পরিধান কর। কেননা এটি পূত-পবিত্র। আর এর দ্বারা তোমাদের মৃতদের কাফন পরাও’। (তিরমিযী হা/২৮১০; মিশকাত হা/৪৩৩৭)

অন্য বর্ণনায় রয়েছে, রাসূল (ছাঃ) বলেন, তোমাদের জন্য সর্বোত্তম পোষাক হ’ল সাদা পোষাক। এই পোষাকে তোমাদের মৃতদের কাফন পরাবে এবং নিজেরাও তা পরবে (ইবনু মাজাহ হা/১৪৭২; মিশকাত হা/১৬৩৮; ছহীহুল জামে‘ হা/৩৩০৫)

আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘রাসূল (ছাঃ)-কে তিনটি সাদা কাপড়ে কাফন পরানো হয়েছিল’ (বুখারী হা/১২৬৪; মুসলিম হা/৯৪১)। সুতরাং সবুজ রঙের কোন বিশেষত্ব ইসলামে নেই।

সবুজ রং সম্পর্কে কেবল এতটুকুই এসেছে যে, হাশরের মাঠে রাসূল (ছাঃ)-কে সবুজ পোষাক দেওয়া হবে এবং শহীদদের রূহ জান্নাতে সবুজ পাখির ভিতর থাকবে। যেমন-
কা‘ব ইবনে মালিক (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘ক্বিয়ামতের মাঠে মানুষকে উঠানো হবে। আমি এবং আমার উম্মত একটি উপত্যকার উপর থাকব। আমার প্রতিপালক আমাকে সবুজ জোড়া পরাবেন। তারপর আমাকে কথা বলার অনুমতি দেয়া হবে। তখন আমি আল্লাহর ইচ্ছায় যা বলার বলব। এটাই হচ্ছে মাক্বামে মাহমূদ’ (সিলসিলা ছাহীহাহ হা/২৩৭০, ইবনে হিববান হা/৬৪৪৫)

আর শহীদদের রূহ সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ) বলেন, তাদের রূহ সবুজ পাখির পেটে থেকে জান্নাতের বিভিন্ন নদী ও বাগান থেকে আহার করে (মুসলিম হা/৪৯৯৩)

সুতরাং যারা সবুজ রংকে বিশেষ পবিত্র মনে করে এবং প্রশ্নে বর্ণিত ভ্রান্ত আক্বীদা সমূহ পোষণ করে, তারা এরূপ দলীলবিহীন ও রাসূলের আদর্শ বিরোধী আক্বীদা পোষণের কারণে রাসূল (ছাঃ)-এর শাফা‘আত থেকে বঞ্চিত হবে। কেননা সেদিন রাসূল (ছাঃ) তাদের বলবেন, দূর হও দূর হও, যারা আমার পরে আমার দ্বীনকে পরিবর্তন করেছ’ (বুখারী হা/৭০৫০; মুসলিম হা/২২৯০; মিশকাত হা/৫৫৭১ ‘ফিতান’ অধ্যায় ‘হাউয ও শাফা‘আত’ অনুচ্ছেদ)

সূত্র: মাসিক আত-তাহরীক।

➥ লিংকটি কপি অথবা প্রিন্ট করে শেয়ার করুন:
পুরোটা দেখুন

Mahmud Ibn Shahid Ullah

"যে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়, সৎকর্ম করে এবং বলে, আমি একজন মুসলিম, তার কথা অপেক্ষা উত্তম কথা আর কার?" আমি একজন তালিবুল ইলম। আমি নিজেকে ভুলের উর্ধ্বে মনে করি না এবং আমিই হক্ব বাকি সবাই বাতিল এমনও ভাবিনা। অতএব, আমার দ্বারা ভুলত্রুটি হলে নাসীহা প্রদানের জন্যে অনুরোধ রইল। ❛❛যখন দেখবেন বাত্বিল আপনার উপর সন্তুষ্ট, তখন বুঝে নিবেন আপনি ক্রমের হক্ব থেকে বক্রপথে ধবিত হচ্ছেন।❞
এছাড়াও পড়ে দেখুন
Close
Back to top button