আক্বীদাহ

প্রশ্ন : কাদিয়ানীদের পরিচয় ও তাদের আক্বীদাসমূহ জানতে চাই।

উত্তর : শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে অস্বীকার করায় কাদিয়ানী সম্প্রদায় কাফের। চৌদ্দশ’ হিজরীর প্রথম দিকে গোলাম আহমাদ কাদিয়ানীর (১৮৩৫-১৯০৮) মাধ্যমে মুসলিমদেরকে বিভ্রান্ত করার জন্য ইংরেজদের পৃষ্ঠপোষকতায় এ সম্প্রদায় জন্মলাভ করে (পৃঃ ১১৮-২২)।

গোলাম আহমাদ প্রথমে নিজেকে মুজাদ্দিদ ও ইমাম মাহদী দাবী করে। এরপর নিজেকে ঈসা ইবনু মারইয়াম এবং সবশেষে নিজেকে ‘নবী’ বলে দাবী করে। এমনকি মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর চেয়ে নিজেকে শ্রেষ্ঠ বলে (পৃঃ ১০৮)।

নিম্নে তাদের কিছু আক্বীদা উল্লেখ করা হ’ল :

(১) তারা বিশ্বাস করে যে, স্বয়ং আল্লাহ্ ছালাত আদায় করেন, ছওম পালন করেন, ঘুমান, জাগ্রত থাকেন, লিখেন, সঠিক করেন, ভুল করেন, স্ত্রীর সাথে মিলিত হন ইত্যাদি (পৃঃ ৯৭)।

(২) তারা মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে শেষনবী বলে স্বীকার করে না (পৃঃ ১০২)।

(৩) তারা বিশ্বাস করে যে, গোলাম আহমাদ কাদিয়ানী নবী ও রাসূলগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ (পৃঃ ১০৩, ১০৮)।

(৪) তারা বিশ্বাস করে যে, গোলাম আহমাদের নিকট জিবরীল (আঃ) অহী নিয়ে আগমন করতেন (পৃঃ ১০৬)।

(৫) যারা গোলাম আহমাদকে বিশ্বাস করে না তাদেরকে তারা ‘কাফির’ আখ্যা দিয়ে থাকে এবং তাদেরকে চিরস্থায়ী জাহান্নামী মনে করে (পৃঃ ১২২)।

(৬) তারা মুসলিমদের পিছনে ছালাত আদায় করাকে জায়েয মনে করে না এবং মুসলমানদের সাথে বিবাহ-শাদী হারাম মনে করে ও তাদের কবরস্থানে মুসলমানদের দাফন নিষিদ্ধ বলে’ (পৃঃ ৩৪, ৩৬-৩৭)।

(৭) বৃটিশ প্রভুদের খুশী করার জন্য গোলাম আহমাদ কাদিয়ানী তার বায়‘আত নামায় বলেন, যে ব্যক্তি ইংরেজ হুকুমতের আনুগত্য করে না, বরং তাদের বিরুদ্ধে মিছিল করে, সে ব্যক্তি আমাদের দলভুক্ত নয়’ (পৃঃ ১২১-২২)।

ইংরেজরা সবচেয়ে ভয় পায় মুসলমানদের জিহাদী জাযবাকে। তাই তিনি লেখেন, তোমরা এখন থেকে জিহাদের চিন্তা বাদ দাও। কেননা দ্বীনের জন্য যুদ্ধ হারাম হয়ে গেছে। এখন ইমাম ও মসীহ এসে গেছেন এবং আসমান থেকে আল্লাহর নূর অবতরণ করেছেন। অতএব কোন জিহাদ নেই। সুতরাং যারা এখন আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করবে, তারা আল্লাহর শত্রু’ (পৃঃ ১১৯)।

(৮) তাঁর লিখিত বই ‘আল-কিতাবুল মুবীন’-কে তারা কুরআনের ন্যায় মনে করে, যা বিশ পারায় সমাপ্ত এবং এর বিরোধী সবকিছুকে তারা বাতিল গণ্য করে (পৃঃ ১০৮, ১১৭)। (৯) তারা কাদিয়ান শহরকে মক্কা-মদীনার চেয়ে মর্যাদাপূর্ণ মনে করে এবং ঐ শহরের মাটিকে তারা ‘হারাম শরীফ’ বলে (পৃঃ ১১১-১২)। (১০) তারা তাদের দ্বীনকে পৃথক ও নতুন পরিপূর্ণ দ্বীন মনে করে। গোলাম আহমদের সাথীদেরকে ‘ছাহাবা’ এবং তার অনুসারীদের নতুন ‘উম্মত’ বলে (পৃঃ ১১০)। (১১) কাদিয়ানে তাদের বার্ষিক সম্মেলনকে ‘হজ্জ’ মনে করে (১১৬)। এছাড়াও তাদের বহু নিকৃষ্ট আক্বীদা রয়েছে (বিস্তারিত দ্রঃ ইহসান ইলাহী যাহীর, আল-ক্বাদিয়ানিয়াহ : দিরাসাত ও তাহলীল (রিয়াদ : ১৪০৪/১৯৮৪), পৃঃ ৯৪-১২৩; ১৫৪-৫৯)।

গোলাম আহমাদের শেষ পরিণতি : অল ইন্ডিয়া আহলেহাদীছ কনফারেন্স-এর সেক্রেটারী ও সাপ্তাহিক ‘আখবারে আহলেহাদীছ’ পত্রিকার সম্পাদক আবুল অফা ছানাউল্লাহ্ অমৃতসরী (রহঃ) অনেকগুলি মুনাযারায় তাকে পরাজিত করেন। মাওলানা ছানাউল্লাহর আগুনঝরা বক্তৃতা ও ক্ষুরধার লেখনীতে অতিষ্ঠ হয়ে গোলাম আহমাদ ১৯০৭ সালের ১৫ই এপ্রিল তারিখে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে মাওলানা ছানাউল্লাহকে ‘মুবাহালা’ করার আহবান জানিয়ে বলেন, আমাদের দু’জনের মধ্যে যে মিথ্যাবাদী, তাকে যেন আল্লাহ সত্যবাদীর জীবদ্দশায় মৃত্যু দান করেন’।

আল্লাহ মিথ্যুকের দো‘আ কবুল করেন এবং বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ১৩ মাস ১০ দিন পর ১৯০৮ সালের ২৬ মে কঠিন কলেরায় আক্রান্ত হয়ে নাক-মুখ দিয়ে পায়খানা বের হওয়া অবস্থায় এই ভন্ডনবী ন্যক্কারজনকভাবে লাহোরে নিজ কক্ষের টয়লেটে মৃত্যুবরণ করেন। অথচ মুবাহালা গ্রহণকারী সত্যসেবী আহলেহাদীছ নেতা আল্লামা ছানাউল্লাহ আমৃতসরী মৃত্যুবরণ করেন মিথ্যাবাদীর মৃত্যুর প্রায় ৪০ বছর পরে ১৯৪৮ সালের ১৫ই মার্চ তারিখে। ফালিল্লা-হিল হাম্দ।

সূত্র: মাসিক আত-তাহরীক।

➥ লিংকটি কপি অথবা প্রিন্ট করে শেয়ার করুন:
পুরোটা দেখুন

Mahmud Ibn Shahid Ullah

"যে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়, সৎকর্ম করে এবং বলে, আমি একজন মুসলিম, তার কথা অপেক্ষা উত্তম কথা আর কার?" আমি একজন তালিবুল ইলম। আমি নিজেকে ভুলের উর্ধ্বে মনে করি না এবং আমিই হক্ব বাকি সবাই বাতিল এমনও ভাবিনা। অতএব, আমার দ্বারা ভুলত্রুটি হলে নাসীহা প্রদানের জন্যে অনুরোধ রইল। ❛❛যখন দেখবেন বাত্বিল আপনার উপর সন্তুষ্ট, তখন বুঝে নিবেন আপনি ক্রমের হক্ব থেকে বক্রপথে ধবিত হচ্ছেন।❞
এছাড়াও পড়ে দেখুন
Close
Back to top button