জান্নাত ও জাহান্নাম

প্রশ্ন : কুরআনে বলা আছে, যারা জাহান্নামে যাবে তারা চিরস্থায়ী জাহান্নামী। কিন্তু ছহীহ বুখারীতে রয়েছে যে, আল্লাহ এক সময় মুসলিম জাহান্নামীদেরকে মাফ করে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। তাহলে কি এই হাদীছটি কুরআনের ঐ আয়াতের সাথে সাংঘর্ষিক নয়?

উত্তর : কুরআনের আয়াত ও হাদীছ পারস্পরিক সাংঘর্ষিক নয়, বরং দু’টিই স্ব-স্ব স্থানে প্রাসঙ্গিক এবং একে অপরের পরিপূরক। সাধারণত আল্লাহ যত জায়গায় خٰلِدِیۡنَ فِیۡہَا ‘তারা জাহান্নামে স্থায়ী হবে’ বলেছেন, তার প্রায় জায়গাতেই কাফির, মুশরিক অথবা মুনাফিকদেরকে সম্বোধন করে বলেছেন।

যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا  وَ کَذَّبُوۡا بِاٰیٰتِنَاۤ اُولٰٓئِکَ اَصۡحٰبُ النَّارِ خٰلِدِیۡنَ فِیۡہَا ؕ وَ  بِئۡسَ الۡمَصِیۡرُ

‘আর যারা কুফরী করবে এবং আমার নিদর্শনসমূহকে অস্বীকার করবে, তারাই জাহান্নামের অধিবাসী; সেখানে তারা স্থায়ী হবে। কত মন্দ ঐ প্রত্যাবর্তনস্থল!’ (সূরা আত-তাগাবূন : ১০)।

অন্যত্র তিনি বলেন, ‘নিশ্চয় আহলে কিতাব ও মুশরিকদের মধ্যে যারা কুফরী করেছে, তারা জাহান্নামের আগুনের মধ্যে স্থায়ীভাবে অবস্থান করবে; তারাই সৃষ্টির অধম’ (সূরা আল-বাইয়্যিনাহ : ৬)।

তিনি আরো বলেন, ‘আল্লাহ মুনাফিক পুরুষ, মুনাফিক নারী ও কাফিরদেরকে জাহান্নামের আগুনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, সেখানে তারা চিরকাল থাকবে, এটা তাদের জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তাদেরকে অভিশাপ করেছেন। আর তাদের জন্য রয়েছে চিরস্থায়ী শাস্তি’ (সূরা আত-তওবাহ : ৬৮)।

এছাড়াও সূরা আল-বাক্বারাহ : ১৬১-১৬২, ১৬৭; সূরা আলে ‘ইমরান : ৮৮; সূরা আন-নিসা : ১৬৯; সূরা আল-মায়িদাহ : ৩৭; সূরা আল-নাহল : ২৮-২৯; সূরা আয-যুমার : ৭২; সূরা আল-গাফির : ৭৬; সূরা আল-হাশর : ১৭ এবং সূরা আল-জিন : ২৩ আয়াতসমূহে বর্ণিত হয়েছে।

হাদীছের মধ্যে যাদের ক্ষমা করার কথা বলা হয়েছে তারা হল- পাপী মুসলিম। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ إِلَّا نَفْسٌ مُسْلِمَةٌ ‘মুসলিম ব্যতীত অন্য কোন ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না’ (ছহীহ বুখারী, হা/৩০৬২, ৪২০৩-৪২০৪, ৬৬০৬; ছহীহ মুসলিম, হা/১১১, ২০৫)।

অন্যত্র তিনি বলেন, ‘…এবং আমার উম্মতের অবশিষ্ট লোকদের জাহান্নামীদের সঙ্গে জাহান্নামে প্রবেশ করানো হবে। অতঃপর জাহান্নামবাসীরা বলবে, ‘তোমরা যে আল্লাহর ইবাদত করতে এবং তাঁর সঙ্গে কাউকে শরীক করতে না, আজ তা তোমাদের কোন উপকার করতে পারল না। একথা শুনে আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, ‘আমার সম্মানের কসম, আমি অবশ্যই তাদের জাহান্নাম থেকে মুক্ত করে দেবো। সুতরাং তাদের জাহান্নাম থেকে এমতাবস্থায় বের করা হবে যে, তারা জ্বলে-পুড়ে জড়োসড়ো হয়ে গিয়েছিল। অতঃপর তাদের আবে-হায়াত (জীবন) নামক নদীতে প্রবেশ করানো হবে, ফলত স্রোতবাহিত উর্বর পলিতে গজিয়ে উঠা শস্য দানার ন্যায় তারা সজীব হয়ে উঠবে। তাদের ললাটে লিখে দেয়া হবে, ‘এরা আল্লাহর পক্ষ থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত দল। অতঃপর তাদের নিয়ে গিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে। জান্নাতবাসীগণ তাদের জাহান্নামবাসী বলে সম্মোধন করলে, আল্লাহ বলবেন, ‘বরং এরা আল্লাহর পক্ষ থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত দল’ (মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৪৬৯-১২৪৭০; ইবনু খুযাইমা, হা/৬০১; দারেমী, হা/৩৫; ইবনু মানদাহ, হা/৮৭৭, সনদ হাসান)।

অন্যত্র নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘…কতকগুলো সম্প্রদায় তাদের গুনাহের কারণে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষিপ্ত হবে এবং জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে। অতঃপর আল্লাহ নিজ রহমতে তাদেরকে ক্ষমা করে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। তাদেরকে ‘জাহান্নামী’ বলা হবে’ (ছহীহ বুখারী, হা/৬৫৫৯, ৬৫৬৬, ৭৪৫০)।

 

সূত্র: মাসিক আল-ইখলাছ।

➥ লিংকটি কপি অথবা প্রিন্ট করে শেয়ার করুন:
পুরোটা দেখুন

Mahmud Ibn Shahid Ullah

"যে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়, সৎকর্ম করে এবং বলে, আমি একজন মুসলিম, তার কথা অপেক্ষা উত্তম কথা আর কার?" আমি একজন তালিবুল ইলম। আমি নিজেকে ভুলের উর্ধ্বে মনে করি না এবং আমিই হক্ব বাকি সবাই বাতিল এমনও ভাবিনা। অতএব, আমার দ্বারা ভুলত্রুটি হলে নাসীহা প্রদানের জন্যে অনুরোধ রইল। ❛❛যখন দেখবেন বাত্বিল আপনার উপর সন্তুষ্ট, তখন বুঝে নিবেন আপনি ক্রমের হক্ব থেকে বক্রপথে ধবিত হচ্ছেন।❞
Back to top button