অন্যান্য

প্রশ্ন: মজলুম কাকে বলে?আখিরাতের জুলুমের পরিণতি কি?

আপনার জিজ্ঞাসা  ইসলামিক জিজ্ঞাসা ও জবাব ইসলামিক প্রশ্নোত্তর 

 

প্রশ্ন: মজলুম কাকে বলে? যেমন: আমাকে কেউ একজন অন্যায়ভাবে গালি দিয়ে কষ্ট দিলো। আমি এতে কষ্ট পেয়ে কাঁদলাম।

এখন আমি কি মজলুম হয়ে গেলাম? মজলুমের বদ দুয়া আর আল্লাহর মধ্যে পর্দা থাকে না-এ কথা কি ঠিক?

আর সে যদি মাফ না চায় আর আমি যদি তাকে নিজ থেকে মাফ না করি তাহলে কি আমার গুনাহ হবে?

উত্তর: কারো প্রতি অন্যায় আচরণ করাকেই জুলুম বলা হয়। যে অন্যায় করল সে জালিম (অত্যাচারী) আর যার উপর অন্যায় করা হল সে মাজলুম (অত্যাচারিত)

জুলুমের উদাহরণ: অন্যায়ভাবে আঘাত করা, রক্তপাত ঘটানো, সম্পদ লুণ্ঠন করা, অধিকার থেকে বঞ্চিত করা, ন্যায় বিচার না করা, গালি দেয়া, অপবাদ দেয়া, কারো বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া, গিবত বা অসাক্ষাতে দোষত্রুটি নিয়ে সমালোচনা করা বা অন্য কোনো উপায়ে অন্যায়ভাবে কষ্ট দেয়া ইত্যাদি। এগুলো সবই জুলুমের অন্তর্ভুক্ত।

জুলুমের পরিণতি: মাজলুমের বদদুআ আর আল্লাহর মাঝে কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা মাজলুমের দুআ সরাসরি কবুল করেন।

হাদিসে বর্ণিত হয়েছেে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

اتَّقِ دَعْوَةَ الْمَظْلُومِ فَإِنَّهَا لَيْسَ بَيْنَهَا وَبَيْنَ اللَّهِ حِجَابٌ

“মাজলুমের বদদোয়া থেকে বেঁচে থাক। কারণ তার বদদোয়া ও আল্লাহর মাঝে কোন পর্দা নেই।।” (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)

আখিরাতে জুলুমের পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ। সে দিন মানুষের অন্যায়-জুলুম-অবিচারগুলো অন্ধকার রূপ ধারণ করে সামনে এসে হাজির হবে। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:

اتَّقُوا الظُّلْمَ ، فَإِنَّ الظُّلْمَ ظُلُمَاتٌ يَوْمَ الْقِيَامَةِ

“তোমরা জুলুম থেকে বেঁচে থাকো। কেননা জুলুম কিয়ামতের দিন অন্ধকার রূপ নিয়ে হাজির হবে।” (সহীহ মুসলিম)

সবচেয়ে মহান ন্যায় বিচারক মহান আল্লাহ সে দিন বিচারের কাঠ গড়ায় জালিমদের বিচার করবেন। তিনি মাজলুমের পক্ষে রায় দিবেন।

তিনি জালিমের নেকি কর্তন করে মাজলুমকে দান করবেন আর মাজলুমের গুনাহ জালিমের উপর চাপিয়ে দিবেন। আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন। আমীন।

ক্ষমা ও সমঝোতা উত্তম: যদি দুনিয়াতেই একে অপরের সাথে সমঝোতা করে নেয়, ক্ষমা চায় অথবা মাজলুম ব্যক্তি নিজের পক্ষ থেকে জালিমকে ক্ষমা করে দেয় তাহলে তা নি:সন্দেহে উত্তম। এ জন্য সে আখিরাতে প্রতিদান পাবে।
▪ আল্লাহ তাআলা বলেন:

وَإِن تَعْفُوا وَتَصْفَحُوا وَتَغْفِرُوا فَإِنَّ اللَّـهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ

“যদি তোমরা মার্জনা কর, উপেক্ষা কর এবং ক্ষমা কর, তবে আল্লাহ ক্ষমাশীল, করুণাময়।” (সূরা তাগাবুন: ১৪)

▪ আল্লাহ আরও বলেন:
وَأَن تَعْفُوا أَقْرَبُ لِلتَّقْوَىٰ ۚ

“আর তোমরা যদি ক্ষমা কর, তবে তা হবে তাকওয়া (আল্লাহ ভীতি) এর অধিক নিকটবর্তী।” (সূরা বাকারা: ২৩৭)

উল্লেখ্য যে, সব চেয়ে বড় জুলুম হল, আল্লাহর ইবাদতে শিরক করা। তাছাড়া মানুষ যখন আল্লাহর অবাধ্যতা বা পাপকর্মে লিপ্ত হয় তখন সে যেন নিজের উপর নিজেই জুলুম করে। প্রতিটি পাপকর্মই জুলুমের অন্তর্ভুক্ত।

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে জুলুম, অবিচার ও সকল প্রকার অন্যায় আচরণ থেকে হেফাজত করুন। আমীন।

▬▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
(লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়)
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।

➥ লিংকটি কপি অথবা প্রিন্ট করে শেয়ার করুন:
পুরোটা দেখুন

মাহবুব বিন আনোয়ার

❝ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া কোন হক ইলাহ নেই,এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বান্দা ও রাসূল।❞ আমি যদিও একজন জেনারেল পড়ুয়া ছাত্র তাই আমার পক্ষে ভুল হওয়া অসম্ভব কিছু না, আমি ইসলামী শরীইয়াহ বিষয়ক জ্ঞান অর্জনের চেষ্টা করছি এবং এর সাথে মানুষ কে রাসুল (সা:) এর হাদিস এবং আমাদের সালফে সালেহীনদের আদর্শের দিকে দাওয়াত দেওয়ার চেষ্টা করি। যদি আমার কোন ভুল হয় ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন এবং সেটা আমাকে জানাবেন যাতে আমি শুধরে নিতে পারি।
এছাড়াও পড়ে দেখুন
Close
Back to top button