প্রশ্ন: রমযান মাসের ফযীলত ও মর্যাদা সম্পর্কে জানতে চাই।
উত্তর: চন্দ্র মাসের এটা এক অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ মাস।
এ মাসের ফযীলত অপরিসীম। নীচে ধারাবাহিকভাবে রমযান মাসের কিছু ফযীলত তুলে ধরা হল :
[১] ইসলামের পাঁচটি রুকনের একটি রুকন হল সিয়াম। আর এ সিয়াম পালন করা হয় এ মাসেই।আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
﴿ ﻳَٰٓﺄَﻳُّﻬَﺎ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺀَﺍﻣَﻨُﻮﺍْ ﻛُﺘِﺐَ ﻋَﻠَﻴۡﻜُﻢُ ﭐﻟﺼِّﻴَﺎﻡُ ﻛَﻤَﺎ ﻛُﺘِﺐَ ﻋَﻠَﻰ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻣِﻦ ﻗَﺒۡﻠِﻜُﻢۡ ﻟَﻌَﻠَّﻜُﻢۡ ﺗَﺘَّﻘُﻮﻥَ ١٨٣ ﴾ [ ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ : ١٨٣ ]
অর্থাৎ হে মুমিনগণ! তোমাদের উপর সিয়াম ফরয করা হয়েছে, যেমন ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে তোমরা মুত্তাকী হতে পার।
(বাকারাহ : ১৮৩)
[২] এ মাসের সিয়াম পালন জান্নাত লাভের একটি মাধ্যম।নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
ﻣَﻦْ ﺁﻣَﻦَ ﺑِﺎﻟﻠﻪِ ﻭَﺑِﺮَﺳُﻮﻟِﻪِ ﻭَﺃَﻗَﺎﻡَ ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓَ ﻭﺁﺗﻰ ﺍﻟﺰَّﻛَﺎﺓَ ﻭَﺻَﺎﻡَ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﻛَﺎﻥَ ﺣَﻘًّﺎ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻠﻪِ ﺃَﻥْ ﻳُﺪْﺧِﻠَﻪُ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔَ
অর্থাৎ যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনল, সালাত কায়েম করল, যাকাত আদায় করল, রমযান মাসে সিয়াম পালন করল তার জন্য আল্লাহর উপর সে বান্দার অধিকার হল তাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দেয়া।
(বুখারী : ২৭৯০)
[৩] রমযান হল কুরআন নাযিলের মাস﴿ ﺷَﻬۡﺮُ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﭐﻟَّﺬِﻱٓ ﺃُﻧﺰِﻝَ ﻓِﻴﻪِ ﭐﻟۡﻘُﺮۡﺀَﺍﻥُ ﻫُﺪٗﻯ ﻟِّﻠﻨَّﺎﺱِ ﻭَﺑَﻴِّﻨَٰﺖٖ ﻣِّﻦَ ﭐﻟۡﻬُﺪَﻯٰ ﻭَﭐﻟۡﻔُﺮۡﻗَﺎﻥِۚ … ١٨٥ ﴾ [ ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ : ١٨٥ ]
অর্থাৎ ‘‘রমাযান মাস- যার মধ্যে কুরআন নাযিল করা হয়েছে লোকেদের পথ প্রদর্শক এবং হিদায়াতের সুস্পষ্ট বর্ণনারূপে এবং সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে।’’
(আল-বাকারা : ১৮৫
সিয়াম যেমন এ মাসে, কুরআনও নাযিল হয়েছে এ মাসেই। ইতিপূর্বেকার তাওরাত, যাবুর, ইঞ্জীলসহ যাবতীয় সকল আসমানী কিতাব এ মাহে রমযানেই নাযিল হয়েছিল।
(সহীহ আল জামে)
এ মাসেই জিবরীল আলাইহিস সালাম নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কুরআন শুনাতেন এবং তাঁর কাছ থেকে তিলাওয়াত শুনতেন।
আর রাসূলের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবনের শেষ রমযানে পূর্ণ কুরআন দু’বার খতম করেছেন।
(মুসলিম)
[৪] রমযান মাসে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়।ﺇِﺫَﺍ ﺟَﺎﺀَ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﻓُﺘِﺤَﺖْ ﺃَﺑْﻮَﺍﺏُ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔَ ﻭَﺃُﻏْﻠِﻘَﺖْ ﺃَﺑْﻮَﺍﺏُ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ ﻭَﺻُﻔِّﺪَﺕِ ﺍﻟﺸَّﻴَﺎﻃِﻴْﻦَ ( ﻭَﻓِﻲْ ﻟَﻔْﻆٍ ﺳُﻠْﺴِﻠَﺖِ ﺍﻟﺸَّﻴَﺎﻃِﻴْﻦَ
‘‘যখন রমযান আসে তখন জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয় আর জাহা্ন্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তানদের আবদ্ধ করা হয়।’’
(মুসলিম : ২৫৪৭)
আর এজন্যই এ মাসে মানুষ ধর্ম-কর্ম ও নেক আমলের দিকে অধিক তৎপর হয় এবং মসজিদের মুসল্লীদের ভীড় অধিকতর হয়।
[৫] এ রমযান মাসের লাইলাতুল কদরের এক রাতের ইবাদত অপরাপর এক হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও বেশি।অর্থাৎ ৮৩ বছর ৪ মাসের ইবাদতের চেয়েও বেশি সাওয়াব হয় এ মাসের ঐ এক রজনীর ইবাদতে।ল
(ক) আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
﴿ ﻟَﻴۡﻠَﺔُ ﭐﻟۡﻘَﺪۡﺭِ ﺧَﻴۡﺮٞ ﻣِّﻦۡ ﺃَﻟۡﻒِ ﺷَﻬۡﺮٖ ٣ ﺗَﻨَﺰَّﻝُ ﭐﻟۡﻤَﻠَٰٓﺌِﻜَﺔُ ﻭَﭐﻟﺮُّﻭﺡُ ﻓِﻴﻬَﺎ ﺑِﺈِﺫۡﻥِ ﺭَﺑِّﻬِﻢ ﻣِّﻦ ﻛُﻞِّ ﺃَﻣۡﺮٖ ٤ ﺳَﻠَٰﻢٌ ﻫِﻲَ ﺣَﺘَّﻰٰ ﻣَﻄۡﻠَﻊِ ﭐﻟۡﻔَﺠۡﺮِ ٥ ﴾ [ ﺍﻟﻘﺪﺭ : ٣، ٥ ]
অর্থাৎ ‘‘কদরের এক রাতের ইবাদত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।
এ রাতে ফেরেশতা আর রূহ (জিরীল আঃ) তাদের রবের অনুমতিক্রমে প্রত্যেক কাজে দুনিয়ায় অবতীর্ণ হয়।
(এ রাতে বিরাজ করে) শান্তি আর শান্তি- তা ফজর উদয় হওয়া পর্যন্ত থাকে।’’
(সূরা ক্বদর : ৪-৫)
(খ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
….. ﻟﻠﻪ ﻓِﻴْﻪِ ﻟَﻴْﻠَﺔٌ ﺧَﻴْﺮٌ ﻣِّﻦْ ﺃَﻟْﻒِ ﺷَﻬْﺮٍ ﻣَﻦْ ﺣَﺮُﻡَ ﺧَﻴْﺮُﻫَﺎ ﻓَﻘَﺪْ ﺣَﺮُﻡَ
‘‘এ মাসে এমন একটি রাত রয়েছে যা হাজার রাতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ।
যে ব্যক্তি এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হল সে মূলতঃ সকল কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত হল।’’
(নাসায়ী : ২১০৬)
[৬] এ পুরো মাস জুড়ে দু‘আ কবূল হয়রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
ﻟِﻜُﻞِّ ﻣُﺴْﻠِﻢٍ ﺩَﻋْﻮَﺓٌ ﻣُﺴْﺘَﺠَﺎﺑَﺔٌ ﻳَﺪْﻋُﻮْ ﺑِﻬَﺎ ﻓِﻲْ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ
অর্থাৎ ‘‘এ রমযান মাসে প্রত্যেক মুসলমান আল্লাহর সমীপে যে দু‘আই করে থাকে-তা মঞ্জুর হয়ে যায়।’’
(আহমাদ : ২/২৫৪)
[৭] এ মাসে মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেয়া হয়রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
ﺇِﻥَّ ﻟِﻠَّﻪِ ﻋُﺘَﻘَﺎﺀَ ﻓِﻲ ﻛُﻞِّ ﻳَﻮْﻡٍ ﻭَﻟَﻴْﻠَﺔٍ، ﻟِﻜُﻞِّ ﻋَﺒْﺪٍ ﻣِﻨْﻬُﻢْ ﺩَﻋْﻮَﺓٌ ﻣُﺴْﺘَﺠَﺎﺑَﺔٌ
অর্থাৎ (মাহে রমাযানে) প্রতিরাত ও দিনের বেলায় বহু মানুষকে আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নাম থেকে মুক্তির ঘোষণা দিয়ে থাকেন এবং প্রতিটি রাত ও দিনের বেলায় প্রত্যেক মুসলিমের দু‘আ- মুনাজাত কবূল করা হয়ে থাকে।
(মুসনাদ আহমদ : ৭৪৫০)
[৮] এ মাস জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের মাসরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
ﻳُﻨَﺎﺩِﻱْ ﻣُﻨَﺎﺩٍ ﻛُﻞَّ ﻟَﻴْﻠَﺔٍ : ﻳَﺎ ﺑَﺎﻏِﻰَ ﺍﻟْﺨَﻴْﺮَ ﺃَﻗْﺒِﻞْ ﻭَﻳَﺎ ﺑَﺎﻏِﻲَ ﺍﻟﺸَّﺮِّ ﺃَﻗْﺼِﺮْ ﻭَﻟﻠﻪ ﻋُﺘَﻘَﺎﺀُ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ ﻭَﺫَﻟِﻚَ ﻓِﻲْ ﻛُﻞِّ ﻟَﻴْﻠَﺔٍ
‘‘(এ মাসের)[1] প্রত্যেক রাতে একজন ঘোষণাকারী এ বলে আহবান করতে থাকে যে, হে কল্যাণের অনুসন্ধানকারী তুমি আরো অগ্রসর হও!
হে অসৎ কাজের পথিক, তোমরা অন্যায় পথ চলা বন্ধ কর। (তুমি কি জান?) এ মাসের প্রতি রাতে আল্লাহ তা‘আলা কত লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিযে থাকেন।
(তিরমিযী : ৬৮২)
[৯] এ মাস ক্ষমা লাভের মাসএ মাস ক্ষমা লাভের মাস।
এ মাস পাওয়ার পরও যারা তাদের আমলনামাকে পাপ-পঙ্কিলতা মুক্ত করতে পারল না রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে ধিক্কার দিয়ে বলেছেন :
ﺭَﻏِﻢَ ﺃَﻧْﻒُ ﺭَﺟُﻞٍ ﺩَﺧَﻞَ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﺛُﻢَّ ﺍﻧْﺴَﻠَﺦَ ﻗَﺒْﻞَ ﺃَﻥ ﻳَّﻐْﻔِﺮَﻟَﻪُ
‘‘ঐ ব্যক্তির নাক ধূলায় ধুসরিত হোক যার কাছে রমযান মাস এসে চলে গেল অথচ তার পাপগুলো ক্ষমা করিয়ে নিতে পারল না।’’
(তিরমিযী : ৩৫৪৫)
[১০] রমযান মাসে সৎ কর্মের প্রতিদান বহুগুণে বৃদ্ধি করে দেয়া হয়।এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
ﻣَﻦْ ﺗَﻘَﺮَّﺏَ ﻓِﻴْﻪِ ﺑِﺨَﺼْﻠَﺔٍ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺨَﻴْﺮِ ﻛَﺎﻥَ ﻛَﻤَﻦْ ﺃَﺩَّﻯ ﻓَﺮِﻳْﻀَﺔً ﻓِﻴْﻤَﺎ ﺳِﻮَﺍﻩُ ﻭَﻣَﻦْ ﺃَﺩَّﻯ ﻓِﻴْﻪِ ﻓَﺮِﻳْﻀَﺔٌ ﻛَﺎﻥَ ﻛَﻤَﻦْ ﺃَﺩَّﻯ ﺳَﺒْﻌِﻴْﻦَ ﻓَﺮِﻳْﻀَﺔً ﻓِﻴْﻤَﺎ ﺳِﻮَﺍﻩُ
‘যে ব্যক্তি রমযান মাসে কোন একটি নফল ইবাদত করল, সে যেন অন্য মাসের একটি ফরয আদায় করল। আর রমযানে যে ব্যক্তি একটি ফরয আদায় করল, সে যেন অন্য মাসের ৭০টি ফরয আদায় করল।’
(সহীহ ইবন খুযাইমা : ১৮৮৭, হাদীসটি দুর্বল)
[১১] এ মাসে একটি উমরা করলে একটি হজ্জ আদায়ের সওয়াব হয় এবং তা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে হজ্জ আদায়ের মর্যাদা রাখে।ক- হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
ﻓَﺈِﻥَّ ﻋُﻤْﺮَﺓً ﻓِﻲْ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﺓَﻗْﻀِﻲْ ﺣَﺠَّﺔً ﻣَﻌِﻲْ
‘‘রমযান মাসে উমরা করা আমার সাথে হজ্জ আদায় করার সমতুল্য’’।
(বুখারী : ১৮৬৩)
হাদীসে আছে,
খ-একজন মেয়েলোক এসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করল,
ﻣَﺎ ﻳَﻌْﺪِﻝُ ﺣَﺠَّﺔٌ ﻣَﻌَﻚَ؟ ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﻋُﻤْﺮَﺓُ ﻓِﻲْ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ
‘‘কোন ইবাদতে আপনার সাথী হয়ে হজ্জ করার সমতুল্য সাওয়াব পাওয়া যায়?
তিনি উত্তর দিলেন, ‘‘রমযান মাসে উমরা করা’’
(আবূ দাউদ : ১৮৯৯০)
[1]. উল্লেখ্য, শুধু রমযানেই নয় পুরো বছর জুড়েই প্রতি রাতে এমন করা হয়।