একদল লোক ক্বিবলামুখী না হয়েই ছালাত আদায় করে নিয়েছে। তাদের এই নামাযের কি হবে?
এ মাসআলাটির দু’টি অবস্থা হতে পারেঃ
প্রথম অবস্থাঃ তারা এমন স্থানে ছিল, যেখানে থেকে ক্বিবলা কোন দিকে জানা তাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। যেমন তারা সফরে ছিল এবং আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ছিল। ফলে ক্বিবলা কোন দিকে বুঝতে পারে না। এ অবস্থায় অনুমান ও গবেষণা করে ক্বিবলা নির্ধারণ করবে। নামায শেষে যদি জানা যায় তাদের ক্বিবলা ঠিক ছিলনা, তবে কোন অসুবিধা নেই। কেননা তারা সাধ্যানুযায়ী আল্লাহকে ভয় করেছে। আল্লাহ্ বলেন, فَاتَّقُوا اللَّهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ “তোমরা সাধ্যানুযায়ী আল্লাহকে ভয় কর।” (সূরা তাগাবুনঃ ১৬) নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, إِذَا أَمَرْتُكُمْ بِأَمْرٍ فَأْتُوا مِنْهُ مَا اسْتَطَعْتُمْ “আমি তোমাদেরকে কোন বিষয়ে আদেশ করলে, সাধ্যানুযায়ী তোমরা তা বাস্তবায়ন করবে।” আল্লাহ্ তা’আলা বিশেষ করে এই মাসআলায় বলেন,
]وَلِلَّهِ الْمَشْرِقُ وَالْمَغْرِبُ فَأَيْنَمَا تُوَلُّوا فَثَمَّ وَجْهُ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ وَاسِعٌ عَلِيمٌ[
“পূর্ব ও পশ্চিম আল্লাহ্র অধিকারে। তোমরা যেদিকেই মুখ ফেরাও সেদিকেই আল্লাহ্র মুখমন্ডল রয়েছে। নিশ্চয় আল্লাহ্ সুপ্রশস্ত মহাজ্ঞানী।” (সূরা বাক্বারাঃ ১১৫)
দ্বিতীয় অবস্থাঃ তারা এমন স্থানে ছিল, কাউকে ক্বিবলা বিষয়ে প্রশ্ন করলেই সমাধান পেয়ে যেত। কিন্তু তারা উদাসীনতা দিয়েছে। তাদের জন্য আবশ্যক হচ্ছে এই নামায ফিরিয়ে পড়া। এই ভুলের কথা নামাযের সময় অতিবাহিত হওয়ার পূর্বে জানা যাক বা পরে। কেননা এক্ষেত্রে ক্বিবলা নির্ধারণ করতে তাদের ভূল হয়ে গেছে। ইচ্ছাকৃতভাবে তারা ক্বিবলা ছেড়ে দেয়নি। কিন্তু তারা মানুষকে এব্যাপারে জিজ্ঞাসা না করে ভুল করেছে। অলসতা ও উদাসীনতার পরিচয় দিয়েছে। তবে জানা উচিৎ ক্বিবলার দিক থেকে সামান্য সরে গেলে নামাযের কোন ক্ষতি হবে না। ডান দিকে বা বাম দিকে সামান্য সরে গেলে কোন অসুবিধা হবে না। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদ্বীনার অধিবাসীদের বলেন, مَا بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ قِبْلَةٌ “পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যবর্তী স্থানে রয়েছে ক্বিবলা।” অতএব যারা কা’বা থেকে উত্তর দিকে রয়েছে তাদেরকে আমরা বলবঃ পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যবর্তী স্থানে ক্বিবলা। অনুরূপ তাদের ক্ষেত্রে যারা দক্ষীণ দিকে থাকে। আর যারা পূর্ব বা পশ্চিম দিকে থাকে, তাদের ক্বিবলা হচ্ছে উত্তর ও দক্ষীণ দিকের মধ্যবর্তী স্থানে। অতএব সামান্য বাঁকা হলে নামাযে কোন প্রভাব পড়বে না বা ক্ষতি হবেনা।
উল্লেখ্য যে, মসজিদুল হারামে যারা কা’বা ঘর প্রত্যক্ষ করতে সক্ষম তাদের জন্য ওয়াজিব হচ্ছে মূল কা’বাকে সামনে রাখা। কেননা মূল কা’বা থেকে কিছুটা বাঁকা হয়ে দাঁড়ালে সে ক্বিবলামুখী হয়ে দাঁড়ালোনা। দেখা যায় অনেক লোক মসজিদুল হারামে দীর্ঘ কাতারে দাঁড়িয়ে পড়ে, অথচ মূল কা’বার সম্মুখবর্তী হয় না। নিশ্চিতভাবে এদের অনেকেই মূল কা’বা থেকে বাঁকা হয়ে দাঁড়ায়। এটা বিরাট ধরণের ভুল। এব্যাপারে সতর্ক হওয়া ওয়াজিব। উদাসীন হওয়া উচিৎ নয়। কেননা এভাবে নামায আদায় করলে ক্বিবলা ছাড়া নামায পড়া হবে। ফলে নামায বিশুদ্ধ হওয়ার গুরুত্বপূর্ণ শর্ত অনুপসি’ত রয়ে যাবে।
সূত্র: ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম।
লেখক: শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রহঃ)।